প্রথম ফ্ল্যাপের লেখাঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং ব্যক্তিগত রচনার একটি আদর্শ সংকলন এই 'তিন ফুলের ঝাড়।' তিনটা পর্ব সন্নিবেশিত করে বইটা সাজানো হয়েছে বলেই এই নামকরণ--প্রথম পর্বে আছে বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে লেখকের স্মৃতি, মূল্যায়ন এবং ভাষণ। ফজলে হাসান আবেদ, খান সারওয়ার মুরশিদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, ফেরদৌসী রহমানের মতো প্রখ্যাত মানুষদের কথা যেমন বলেছেন লেখক, তেমনি জাহিদ আনোয়ারের মতো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এক কর্মীকে নিয়েও লিখেছেন স্মরণরচনা। দ্বিতীয় পর্বের বিষয় সমকালীন সামাজিক-রাষ্ট্রীয় প্রসঙ্গ। মাননীয় স্পিকার বা ‘নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও তাঁর অশিক্ষিত ড্রাইভার'-এর মতো কলাম থেকে প্রত্যাশা ও শিক্ষা'র মতো চিন্তামূলক কলাম আছে এই পর্বে। তৃতীয় পর্বে ঠাঁই পেয়েছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরই জবানিতে প্রকাশিত লেখা বা তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকার। আমার প্রিয় ঋতু'র অপরূপ লেখাটি অনুলিখিত হলেও এটাকে মৌলিক লেখা না বলে উপায় নেই। সব মিলিয়ে এই বইটি পাঠককে ভাবাবে, প্রাণিত করবে, গুণী মানুষদের সম্পর্কে অবহিত করবে, শ্রদ্ধাশীল করবে; আবার বৈঠকি রচনা পাঠের অনাবিল আনন্দে পাঠকের হৃদয়কে ভরপুর করে তুলবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।