দেশের নাম ‘কোথাও নয়’ আর তার রাজধানীর নাম ‘আবছায়া’, এমন একটি কাল্পনিক দ্বীপদেশকে অবলম্বন করে ষোড়শ শতকে ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী স্যার টমাস মোর একটি আদর্শ সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিকল্প রচনা করেন ‘ইউটোপিয়া' গ্রন্থের মাধ্যমে। এন্থখানির ভাষা ল্যাটিন। রালফ্ রবিনসনকৃত-এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৫৫১ সালে। সেই অনুবাদ থেকে এই বঙ্গানুবাদটি করেন মোহাম্মদ। দরবেশ আলী খান ১৯৬৪ সালে, বাংলা একাডেমির সৌজন্যে। মধ্যযুগীয় ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করলেও তা করা হয়েছে আধুনিক বাংলায়। ১৯৭৮ সালে সে ভাষায় ব্যাপক রদবদল করেন অনুবাদক, এবং একটি দীর্ঘ উপক্রমণিকা সংযোজন করেন। ‘ইউটোপিয়া’ একটি ক্ল্যাসিক-মর্যাদাপ্রাপ্ত গ্রন্থ। মোটামুটি সহজ বাংলায় তার অনুবাদ এবং তার সাথে জ্ঞানগর্ভ উপক্রমণিকা ও অজস্র টীকা এ বইটিকে বাংলাভাষার পাঠকের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে প্রমাণিত হবে। এ পুস্তকের অনুবাদক মোহম্মদ দরবেশ অলী খান। ১৯২৬-এর আগস্ট মাসে বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিছুকাল ইপিসিএস-এর সদস্য হিসাবে (১৯৫৪-৫৮) সরকারী চাকরী করে পদত্যাগ করেন। শিক্ষাঙ্গনে তিনি বাগেরহাট কলেজে রাজনীতির অধ্যাপক (১৯৫২-৫৪), সাতক্ষীরা কলেজে অধ্যক্ষ (১৯৫৮-৬০) ও পিরোজপুর কলেজে অধ্যক্ষ (১৯৬৫-৭২) ছিলেন। ১৯৭২-এর জুলাই থেকে ১৯৮২-এর জুলাই-এ অকালমৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন। ‘ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রাম’-এর চার খণ্ডে প্রকাশিত বাংলা বিশ্বকোষ’-এর জন্য তিনি এক হাজারের বেশি এন্ট্রি লেখেন এবং কিছুকাল (১৯৬৫) বিশ্বকোষের সহকারী সম্পাদক হিশাবেও কাজ করেন। তার প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে (১) বিজ্ঞানের মানসপুত্র বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন, (২) মিসর ও মিসরবাসী, (৩) প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, (৪) মুসলিম চিন্তাধারায় স্বাধীনতা, (৫) ইউটোপিয়া এবং (৬) দি স্পিরিট অব ইসলাম (ইসলামের মর্মবাণী)। তাঁর রচিত ‘প্লেটো ও এরিস্টেটলের রাজনৈতিক চিন্তা’ এবং আধুনিক রীতির পাঠ্যপুস্তক ‘পৌরনীতি পরিচয়’ সুধী মহলে সমাদৃত। ‘বাংলা একাডেমী পত্রিকা’ ও ‘উত্তরাধিকার'-এ তার কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর কবিতার বই ‘মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান-এর কবিতা এবং ছড়ার বই ফুলঝুরি’ প্রকাশিত। এ পর্যন্ত অপ্রকাশিত তার আরও কিছু লেখা প্রকাশের অপেক্ষায়।