এক অদৃশ্য ভাইরাস হঠাৎ সর্বশক্তিমান হয়ে পুরো পৃথিবীকে তছনছ করে দিলো। আধুনিক বিশ্বের বুদ্ধিমান বলে প্রচলিত মেধাবী মানুষকে এক সারিতে এনে একসাথে অবিশ্বাস্যভাবে গৃহবন্দী করে আটকে দিলো। বিনা অস্ত্রে, বিনা যুদ্ধে জাদুকরের ভেলকির মতো দখল কওে নিলো বিশ্ব। যা মানুষের কল্পনাতীত ছিলো। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শীর্ষে অবস্থান করেও মানুষ আজ একবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে অসহায়। শুধু অসহায়ই নয়; নির্বিকার। ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র করোনা নামক ভাইরাসের একচেটিয়া মাস্তানির কাছে, ভায়োলেন্সের কাছে পরাজিত পৃথিবীর সেরা-শ্রেষ্ঠ মানুষ। র্নিবিকার! কোভিড-১৯ নামক অদ্ভুত এই ভয়াবহ ভাইরাসের ভয়ে মানুষের ভালোবাসা বিলুপ্ত। প্রিয় স্বজনের লাশ ছুঁতে পারছে না। শেষবারের মতো মমতায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারছে না। ঠিকমতো শেষকৃত্য সমাপ্ত করতে পারছে না। মায়ের লাশ ফেলে দিচ্ছে জঙ্গলে, বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে মানুষ পালাচ্ছে, সন্তানের লাশ না দেখেই তুলে দিচ্ছে ত্রাণকর্মীদের গাড়িতে। আজ মানুষ কতটা নিরুপায়? ভালোবাসায় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছে না, প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করতে পারছে না, আদর করে চুম্বন করতে পারছে না। মুখে মাস্ক, হাতে গøাভস নিয়ে সামাজিক দূরত্বে দিশেহারা হয়ে কারাবাসের মতো গৃহবন্দী সবাই। যেনো চোখ-মুখ বাঁধা, হাত বাঁধা। লিক্যুইড দিয়ে হাত ধোয়, মানে রক্তমাখা হাত থেকে পাপ ধোয়! হ্যাঁ; পাপ তো বটেই। পৃথিবী, পরিবেশ এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষ তো আর কম অবিচার করেনি; কম অন্যায় করেনি। যার ফলে বিশ্ব আজ বিপর্যন্ত! দিকে-দিকে লাশ আর লাশ; লাখের পর লাখ লাশ শুধু লাশ! লাশের উৎসবে ভিলেনের ভূমিকায় নৃত্য করছে কোভিড-করোনা। মানুষ ভাষাহীন হয়ে মৃত মাছের দৃষ্টিতে সেই সব অস্বাভাবিক দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আর আমরা কবিতা লিখছি- করোনা কালের কবিতা, লকডাউনের কাব্য। এই সব কবিতায় আছে করোনাকালের জীবন-যাপনের চিত্র; আছে আমাদের বেদনার কথা, আছে মানুষের ব্যর্থতা আর পরাজয়ের কথা; আছে বিপর্যয় আর অসহায়ত্বের নীরব আর্তনাদ! ফলে ‘মেইড ইন চায়না’য় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কবিতার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের স্বাক্ষর খুব একটা পাওয়া যাবে না। কারণ, যখন কোনো কবিতা বিষয়ভিত্তিক হয়, তখন শিল্প সংকটে এবং সীমাবদ্ধতায় সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে কবির ‘নিজস্ব শৈল্পিক স্বাক্ষর’ না থাকলেও করোনাক্রান্ত সময়ের স্বাক্ষর পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস। পৃথিবীর সবকিছু স্বাভাবিক হলে অথবা পৃথিবীর নতুন সংস্করণ হলে, এই ঘন আঁধারের পর আলোকিত ভোর এলে আমরা আবার আগের মতো পাখিদের সাথে, প্রকৃতির সাথে মিশবো। তখন ‘মেইড ইন চায়না’র প্রিন্ট কপি বের হবে; আপাতত এই অনলাইন অর্থাৎ পিডিএফ ভার্সন পাঠকদের জন্য বিশেষ উপহার।
‘প্রতিদিন কাটে তাঁর সৃষ্টির নকশিকাঁথায়’- তিনি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। জন্ম শেরপুরে ৩০ মে ১৯৫৮। সত্তরের দশকে দৈনিক ও সাপ্তাহিকপত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবনের সূত্রপাত। ১৯৮০-তে সরকারি চাকুরিতে যোগদান। ১৯৯৬ সালে বাধ্যতামূলক অবসর। অতঃপর পুরোদস্তুর লেখালেখিতে মনোনিবেশ। প্রবাসী বাঙালিদের জন্য নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’-এর কর্ণধার। প্রবাস থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সাথে সংযুক্ত। জড়িত আছেন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে।