-:যেমন ছিলেন মুসলিম মহিয়সীরা:- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নারীজাতিকে অনেক মর্যাদা নসিব করেছেন । কারণ , নারীরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর, তাঁদের কোনেই প্রতিপালিত হয় ভবিষ্যতের বড় আলেম , মনীষী , জ্ঞানী - গুণী । তাই আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর দায়িত্ব অনেক বেশি । সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায়ই শিশু বেড়ে উঠতে থাকে । মায়ের আচার - আচরণের প্রভাব শিশুর ওপর পড়তে থাকে এবং সে হিসাবেই দুনিয়ার মানুষ এখন বড় বড় মনীষী আলেম এবং ওলিকে চেনে । মূলত তাঁদের মায়েদের প্রচেষ্টায়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে এমন উঁচু মর্যাদায় সমাসীন করেছেন । তাঁরা এমন মা ছিলেন , যাঁরা ভোগ - বিলাসিতা পরিহার করে , ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করে নিজের সন্তানদের দীনের আলোয় আলোকিত করেছেন । শৈশব থেকেই অন্তরে সৃষ্টি করেছেন পরকালের ভাবনা । তাঁদের তালিম - তরবিয়ত পেয়ে স্বভাবগতভাবেই সস্তানরা ন্যায়পরায়ণ , আমানতদার , সত্যভাষী এবং শরিয়তের অনুসারী হয়ে গড়ে উঠেছে । এমন সতী - সাধ্বী নারীদের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আলোচনাই করা হয়েছে ' কেমন ছিলেন মুসলিম মহিয়সীরা ' গ্রন্থে। নন্দিত লেখক অনুবাদক এনামুল হক মাসউদ- এর দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় পাঠকদের কাছে এটি একটি মৌলিক গ্রন্থ হিসাবেই ধরা দিবে । গ্রন্থটি নারী - পুরুষ সবশ্রেণির পাঠকেরই পাথেয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
মুহতারাম এনামুল হক মাসউদ। দীনে হানিফের একনিষ্ঠ অনুসারী একজন আলেমে দীন। জন্ম: ১৯৭৮ সালে। কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার মুড়াবাজাল গ্রামে। কিন্তু মহান আল্লাহ তা'আলার ফায়সালা, মাত্র তিন মাস বয়সে গুরুতর টাইফয়েড জ্বরের ফলে পথচলার সঙ্গী ডান পায়ের কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। শৈশবের এই প্রতিবন্ধকতা তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। এক পা'কে সম্বল করে ক্র্যাচে ভর করেই তিনি উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটতে থাকেন। পড়াশোনার সূচনা হয় তার মহীয়সী মায়ের হাতে। তারপর নিজ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুড়াবাজাল ইসলামিয়া ফয়জুল উলূম মাদরাসায় মক্তব থেকে শরহে বেকায়া পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর বরুড়া দারুল উলূম মাদরাসায় হিদায়া। জামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম মাদরাসায় মেশকাত জামাতে অধ্যয়ন করেন। তারপর ২০০৫ সালে বাংলাদেশের সুপরিচিত ইসলামি বিদ্যাপীঠ, চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। শুরু হয় কর্মজীবন। কিন্তু জীবনের পথচলা আরও একবার থামিয়ে দেয়। ২০১৯ সালে ভালো-পা'টির কার্যক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি হয়ে যান একদম বিছানাবন্দি। তবে তিনি সন্তুষ্টচিত্তে মহান রবের ফায়সালা হাসিমুখে বরণ করে নেন। একজন কর্মঠ মানুষের জীবনে এটা অনেক বড় একটি পরীক্ষা। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। উদ্যম ও কর্ম-তৎপর এ মানুষটি বিছানায় বন্দি থেকেই দীনী গবেষণায় নিজেকে নিরলস ব্যস্ত রেখেছেন। সকল প্রতিবন্ধকতা ও শারীরিক অক্ষমতা এক পাশে রেখে স্রোতস্রীনি ঝর্ণার মতোই যেন তিনি বহমান। উম্মাহর দরদে দরদি হয়ে ইমানের অপরিহার্য বিষয় ইমান-আকিদা ও তাওহিদ বিষয়ে একের পর এক মূল্যবান গ্রন্থ আমাদেরকে উপহার দিয়ে চলেছেন। মূলত তিনি একজন লেখক-অনুবাদক ও দীনের মুখলিস দায়ী। কুরআন শিক্ষা গবেষক ও মু'আল্লিম প্রশিক্ষক । তার অনুদিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- আল ওয়ালা ওয়াল বারা, কিতাবুত তাওহিদ, হারামাইনের আর্তনাদ ও বিশুদ্ধ তাওহিদ ইত্যাদি। ব্যক্তিজীবনে তিনি স্ত্রী ও ৪ সন্তানের জনক। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে এবং বাবা-মাকে নিয়ে তার সংসার। কোন এক ক্লান্ত দুপুরে প্রথম দেখা হয়েছিল। সেদিন থেকে তিনি মুগ্ধতা বাড়িয়ে যাচ্ছেন। গুণমুগ্ধ আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তার কাজগুলো দেখছি। শারীরিক বাধা থাকা স্বত্ত্বেও তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন অনাগত উম্মাহর জন্যে। কর্ম প্রিয় ভাইটির জন্য হৃদয় থেকে দু'আ ও শুভ কামনা। ইন শা আল্লাহ সাময়িক এই কষ্ট শেষে একদিন সবাই আমরা মিলিত হবো চিরসুখের জান্নাতে । আল্লাহ তা'আলা তাঁকে সুস্থ্যতা ও ইমানি অবিচলতা দান করুন । তার কর্মে দান করুন বারাকাহ ।