বাংলাদেশের আদিবাসী ও উপজাতি প্রসঙ্গ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ বাংলাদেশের আদিবাসী ও উপজাতি প্রসঙ্গ আদিবাসী ও উপজাতি শব্দ দুটির পৃথক প্রতিশব্দ থাকলেও বাংলায় বিভিন্ন লেখক এদেরকে প্রায় সমার্থক হিসাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। ‘আরণ্য জনপদে’ ও ‘আরণ্য সংস্কৃতি’ শীর্ষক গ্রন্থ দুটির লেখক আব্দুস সাত্তার আদিবাসী ও উপজাতি শব্দকে সমার্থক ধরেছেন। আরণ্য জনপদে (প্রথম প্রকাশ-১৯৬৬) শীর্ষক গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি চাকমা, তংচঙ্গ্যা, মগ, কুকি, লুসাই, মুরং, টিপরা, সেন্দুজ, পাঙ্খো, বনজোগী ও খুমীদেরে এক পর্যায়ে যেমন উপজাতি হিসাবে অভিহিত করেছেন, তেমনি সেখানে একটু পরেই আবার মগ প্রভৃতিকে আদিবাসী হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। তাঁর আরণ্য সংস্কৃতি (প্রথম প্রকাশ ১৯৭৭) শীর্ষক গ্রন্থের ভূমিকায়ও লিখেছেন, ‘আরণ্য সংস্কৃতি’ গ্রন্থে আদিবাসী বা উপজাতীয় সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনধারার প্রতিই আলোকপাত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ উপজাতিই অরণ্য অঞ্চলে বাস করে। ....যাই হোক, অরণ্যচারী আদিবাসী বা উপজাতীয় লোকদের সাংস্কৃতিক জীবনধারার মোটামুটি পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি....।’ ফাদার আর. ডবলিউ. টিম কৃত ও ফিরোজ মাহমুদ অনুদিত ‘বাংলাদেশের আদিবাসী’ শীর্ষক গ্রন্থেও একই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। সেখানে এক পর্যায়ে ‘উপজাতীয় জনগোষ্ঠী’ এই উপশিরোনামে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ১৯৮৯ সালে দেশীয় ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কনভেনশনে দেশীয় ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে। দেশীয় জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের সমস্ত উপজাতিকে এর অন্তর্ভুক্ত করা ও বাঙালীদেরকে বাদ দেওয়া দুরূহ। ইংরেজীতে ব্যবহৃত ‘ট্রাইব’ শব্দটি দিয়ে বাঙালী ও আদিবাসী উভয়ই বোঝায়। স্থানীয় ভাবে স্বীকৃত বাংলা আদিবাসী (সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত এবং ভারতে বহুল ব্যবহৃত ‘মূল অধিবাসী’ সকল আদিবাসীকে নির্দেশ করে) শব্দটিই ব্যবহার করা হবে।’১ অবশ্য ট্রাইব শব্দ দিয়ে কোন অর্থে কিভাবে উক্ত গ্রন্থকার বাঙালী ও আদিবাসী উভয়কেই বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। বরং শব্দ ব্যবহারের অধিকতর উপযোগিতা খুঁজতে গিয়ে নূতনভাবে উদ্দেশ্যমূলক বিতর্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
Title
বাংলাদেশের আদিবাসী ও উপজাতি প্রসঙ্গ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ