কাকন রেজা, নিজেকে কবি বলে স্বীকার করতে যার আপত্তি। হয়তো পারফেকশনিজম খুঁজতে গিয়েই এমন হয়। অথচ কবিতা পড়া, বিদেশি কবিতা অনুবাদ আর মৌলিক কবিতা লেখায় বুঁদ থেকেছেন সবসময়। নব্বইয়ের দশকে স্বনামে কবিতাঙ্গনে সক্রিয় থেকেছেন। তারপর হঠাৎ করেই কবিতা থেকে সরে গিয়ে গদ্যের জীবন শুরু। দু’হাতে লিখে চলেছেন প্রবন্ধ, অভিমত কলাম। দেশের সেরা দৈনিকগুলো থেকে শুরু করে দেশের বাইরের বাংলা গণমাধ্যমে তার লেখা নিয়মিত ছাপা হয়। দীর্ঘদিন নিজ নামে কবিতা লেখেননি। লিখেছেন ছদ্মনামে। কেন নিজ নামে নয়, কেন এই অবগুন্ঠন তার তেমন ব্যাখ্যাও তিনি দেননি কখনো। শুধু বলেছেন, কবিতা লেখেন তিনি কেবলি নিজের জন্য। নিজের আনন্দ-বেদনা, সুখ-বিষাদে। এটা তার একান্ত অনুভূতির প্রকাশ এবং নিরাময়। নতুন প্রজন্ম তাকে চেনে মূলত একজন প্রাবন্ধিক হিসেবে। দেশের নানা সমস্যায়, রাজনীতি কিংবা সামাজিক জটিলতা নিরসনে তিনি লিখে চলেছেন। সে লেখা কখনো স্যাটায়ার, কখনো সরাসরি সমালোচনার আঙ্গিকে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম বিষাদের সম্মুখিন হয়েছেন তিনি। কিন্তু সে বিষয়টি তিনি বলতে না করেছেন এখানে। কিছু দুঃখ থাকুক জমা; ‘কিছুটা পুড়ুক পোড়া ভালো, তাতে কেটে যাবে অন্ধকার, খানিক কালো’। তবে এ কথা স্বীকার্য যে শোককে আক্ষরিক অর্থেই কাকন রেজা শক্তিতে পরিণত করেছেন। অন্তত তার প্রবন্ধ সেই শক্তিমত্তার প্রমাণ দেয়। ভীতিপ্রদ প্রতিবেশে ভয়গুলোকে জয় করেই লিখে চলেছেন অবিরাম। তবে ইদানিং নিজ নামে তার কবিতাও গণমাধ্যম কিংবা সাহিত্য ম্যাগাজিনের পাতায় দেখা যাচ্ছে। তিনি ফিরছেন নিজ নামে আবার কবিতায়। আর এই ‘স্থির করে দাও কম্পমান জল’ সেই ফেরারই সাক্ষ্য দেয়। আমরা আশা করবো কাকন রেজা’র কবিতায় ফেরার এ ধারা বাংলাসাহিত্যের চলমানতায় যোগ করবে নতুন ভাবনা-শব্দসঞ্চারের গতিময়তা। শুভপ্রত্যাশা কাকন রেজা’র কবিতায় প্রত্যাবর্তনকে। মাসকাওয়াথ আহসান লেখক ও সাংবাদিক প্রধান সম্পাদক, ই সাউথ এশিয়া