এই কাব্যগ্রন্থ সংকলিত হয়েছে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষকের লেখা বাছাই করা কিছু কবিতা দিয়ে। তাই শুরুতেই রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে দু-একটি কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বিদ্যালয়টি ১৯৩৩ সালে মাইনর ইংলিশ স্কুল (এমই স্কুল) হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীসময়ে কিছুটা বড় পরিসরে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত হয় (আনুমানিক ১৯৫২ সালে)। তৎকালীন সময়ের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজটুকু মোটেও সহজ ছিল না। তবে স্থানীয় মানুষের মাঝে জ্ঞানচর্চার তীব্র আকাক্সক্ষার কাছে সকল বাধা-বিপত্তি পরাভূত হয়েছিল। সকলেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে বিদ্যালয় নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন। প্রচণ্ড রকমের মেধাবী শিক্ষকমণ্ডলী এবং সকলের পবিত্র ইচ্ছায় পরিচালিত বিদ্যালয়টি খুব অল্প সময়েই খ্যাতি অর্জন করে। এই স্কুলে শিক্ষকতা করে অনেকেই বিখ্যাত হয়েছেন এবং ছড়িয়ে দিয়েছেন জ্ঞানের পবিত্র আলো। ছাত্র-ছাত্রীদের কোমল ভাবনায় এই শিক্ষকগণের অনেকেই ‘নক্ষত্র’ এবং কালটি ছিল ‘আলোর সময়’। সেই নক্ষত্রগণের অনেকেই পড়াশোনা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি আরও অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। কেউ ছিলেন গল্পে পটু অথবা নিখুঁত বক্তা, আবার কেউ ছিলেন সংক্রামক হাসি-ঠাট্টার আধার অথবা কেউ দেখাতেন ‘জসমত খাঁয়ের’ ভয়। গল্প কিংবা কবিতা লেখালেখিতে অনেকেরই ছিল শৈল্পিক ভাবনা। এমনি তিনজন কবিতাপ্রেমী শিক্ষকের বিরল সৃষ্টি নিয়েই এই কাব্যগ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। তার মধ্যে শামীম আখতার হেনু স্যার রচয়িতা ও কবি হিসেবে অত্র এলাকায় সুপরিচিত। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘শ্রমের ফসল’ থেকেই অধিকাংশ কবিতা নেওয়া হয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই এই বইয়ের নাম ‘শ্রমের ফসল’ নামকরণ করা হল। নীরব কবি হিসেবে খ্যাতি রয়েছে মো. বদরুল ইসলাম স্যারের। তিনি ইংরেজিতেও কবিতা লিখতেন। তৃতীয় কবি মো. শফিকুল ইসলাম স্যার শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক হিসেবেই অধিক পরিচিত। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকগণের কোমল ভাবনা, দর্শন ও জীবনবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পাঠকের দেওয়া উৎসাহ, সহযোগিতা ও গঠনমূলক সমালোচনা আরও কিছু সাবলীল সৃষ্টিকে বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ করতে সহায়ক হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।