রেজোয়ান সিদ্দিকীর উপন্যাসগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ধারার উপন্যাসই বেশি। এছাড়া আছে সমাজবিশ্লেষণ, পরিবর্তনশীল সামাজিক কাঠামো, মধ্যবিত্ত মানসিকতার বিবর্তন আর চিরন্তন প্রেম। সমাজের মধ্য শ্রেণীর উত্থান, তাদের লোভ লালসা, হিংসা, নতুন গড়ে ওঠা স্থলিত এই মধ্য শ্রেণির রূপকার রেজোয়ান সিদ্দিকী। দেশপ্রেম, প্রতিবাদী কণ্ঠ প্রভৃতি সদাচরণকে জাগরিত করার চেষ্টা করেছেন তার উপন্যাস কিংবা ছোটগল্পগুলোতে। তার প্রথম উপন্যাস ‘ভুল জোৎস্নায় পদলেহন’ প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকসমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি সে ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ‘মৃত্যুর ঠিক আগে’ উপন্যাসটি সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষা-ধর্মী। এই উপন্যাসের নায়ক মোবারক হোসেন চরিত্রহীন ও লম্পট। সেও সিদ্ধান্তহীন লোভী মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সে রাস্তার উপর পড়ে ছিল। তার মনে হচ্ছিল সে মারা গেছে। মৃত্যু ভয় তাকে কাবু করে ফেলল। তার কেবলেই মনে হতে থাকে, মৃত্যুর পর তার মধ্যবিত্ত পাপের জন্য তাকে অবশ্যই দোজখে যেতে হবে। দোজখের যে বর্ণনা সে পড়েছে, অর্ধচেতন অবস্থায় রাস্তায় শুয়ে সে সেই সব দৃশ্য কল্পনা করে এবং কঠিন সাজার কথা ভাবতে থাকে। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, যদি আর একবার জীবন পাই, তবে সব কিছু শুধরে নিব। কেবল বাল কাজ করবো। কোনো নারীকে প্রতারণা করবো না। সত্যি সত্যি সে কিছু সময়ের জন্য জীবন ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু ফিরে পেয়ে সে সত্যকে আঁকড়ে ধরে তাকতে পারেনি। জ্ঞান ফিরলেই সে মিথ্যে বলেছে, যে কথা পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন সে আল্লাহকে ডাকে। বিপদ পেরিয়ে গেলেই তার মনে হয়, এ তো এমনেই পেরিয়েছে। মোবারক হোসেনেরও তাই হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিট। তারপরে সে সত্যি সত্যিই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল।