যে যুগে এখন আমরা বাস করছি, কোনো সন্দেহ নেই, তা বিজ্ঞানের যুগ। যে কোনো যুগই যেমন সেই যুগের মানুষের কাছে আধুনিক, তেমনি যে কোনো যুগকেই বিজ্ঞানের যুগ বলায় বাধা নেই। বিজ্ঞান বরাবর এগিয়ে চলেছে। হতে পারে, কখনো সে এগিয়ে চলেছে দ্রুত, খুবই দ্রুত, আবার কখনো তার এগিয়ে চলার গতি ধীর-মন্থর। সারা বিশ্বে আজ বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি আমাদের চোখে পড়ে, তা অকল্পনীয়। ষাটের দশকে মহাকাশে মানুষ যেদিন প্রথম পা রাখলো, সেদিন থেকেই স্বীকার করতে হয়, বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কিন্তু শুধু মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগেই আজ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও বিদ্যুৎ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান থেকে শুরু করে উদ্ভি বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান পর্যন্ত কোথায় নয় কিন্তু আগ্রহ যার আছে বিষয় জানার ক্ষেত্রে তার বাধা কোথায়? আশার কথা, সম্প্রতি বাংলায় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের গ্রন্থ প্রণীত হচ্ছে। উদ্দেশ্য, একদিকে পাঠক-পাঠিকার কৌতূহল নিবৃত্ত করা, অন্যদিকে জানবার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা। উদ্দেশ্য সাধু সন্দেহ নেই। কিন্তু বাজার চলতি বিভিন্ন বই সে উদ্দেশ্য কতটা পূরণ করতে পারে। বিজ্ঞান মানুষিকতা গঠনেই বা তাদের ভূমিকা কতখানি? যে বিজ্ঞান আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, ঘরে ও বাহিরে যার প্রতি মুহুর্তের উপস্থিতি, সেই বিজ্ঞান সম্পর্কেই আমাদের জানবার কৌতূহল। বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত এই ধরনের এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই গ্রন্থের উপজীব্য। এ ধরনের গ্রন্থের বিশেষ উপযোগিতা আছে। সেজন্যই এমন একটি গ্রন্থের পরিকল্পনা। কৌতূহলী প্রশ্ন এবং তার উত্তরের ভেতর দিয়েই এখানে পাঠক-পাঠিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন এবং সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই পরিচয় স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তরকে মাধ্যম হিসেবে অবলম্বন করার কারণ কী? একটি বিষয়কে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করে অধ্যায়টি সম্পূর্ণ করলে সেই বিষয়টি কিশোর কিশোরীদের আরো বেশি মূল্যবান মনে হতে পারতো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাতে আলোচনার চেহারাটা পরিষ্কার হতো। কিন্তু এইরকম এক পটভূমিতে কিশোর-কিশোরীদের মনে বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণভাবে দৈনন্দিন জীবন থেকে সংগ্রহ করা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ হতো না এবং কিশোর কিশোরীদের তা কতটা আকর্ষণ করতো সে বিষয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা চলে। আলোচ্য গ্রন্থে চারটি অধ্যায় আছে। এর এক একটি অধ্যায়ে বিজ্ঞানের এত বিচিত্র ধরনের প্রশ্ন সংগ্রহ করা হয়েছে যে, তাতে সমগ্র বিষয়টির সঙ্গেই সাধারণভাবে একটা পরিচয় হয়ে যাওয়া সম্ভব। প্রতিটি প্রশ্নের আলোচনাই স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। তবে পুনরোক্তি যাতে না ঘটে, সেদিকেও লক্ষ রাখা হয়েছে। এসব প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্বগুলোর উল্লেখ ও আলোচনাও প্রয়োজনে এসেছে। তাকে উপেক্ষা করা বা অনুল্লেখ্য রাখা হয়নি। প্রথম পর্বের প্রথম অধ্যায়টি জ্যোতির্বিজ্ঞান। দেখা যায়, জীবন ধারণের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই বিষয়টির সঙ্গেই মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সুপ্রাচীনকাল থেকে। তারপর এসেছে পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও বিদ্যুৎ, রসায়ন বিজ্ঞান। এখানে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে পদার্থ বিজ্ঞানকে যেখানে একটি সম্পূর্ণ বিষয় হিসেবে নেওয়া হয়েছে, সেখানে বিদ্যুৎকে বিচ্ছিন্ন করে ইলেকট্রনিক্স ও বিদ্যুৎ নামে একটি অধ্যায় করা হলো কেন? ইলেকট্রনিক্স এবং বিদ্যুৎ-এই দুটি বিষয়েরই মূল কথা- ইলেকট্রনের প্রবাহ। প্রধানত ইলেকট্রনিকস ও বিদ্যুৎ পদার্থ বিজ্ঞানের অন্তর্গত হলেও বিদ্যুৎ দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং পরস্পর অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলছে। এসব কারণেই শাখা দুটিকে পদার্থ বিজ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাতন্ত্র্য দেওয়া হলো। সংকলনে যে-সব প্রশ্ন নেওয়া হয়েছে তাদের চেহারা যতই সরল দেখাক, উত্তর যতই স্বাভাবিক মনে হোক, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সব সময়ে সহজ নয়। গ্রন্থটিতে প্রতিটি প্রশ্নের ক্ষেত্রেই প্রাঞ্জল ভাষায় সম্পূর্ণ উত্তর দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। “বিজ্ঞান-জিজ্ঞাসা" গ্রন্থটি প্রচলিত 'বুক অব নলেজ' বা এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমান কিশোর-কিশোরীদের বিজ্ঞান মানসিকতার উন্মেষের ক্ষেত্রে এই ধরনের গ্রন্থের বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।