কাহিনি-সংক্ষেপ চন্দ্রমুখী ‘নদীমাতা অপেরা’র ষোড়শী নর্তকী। হরিহাটার যাত্রামঞ্চে একদা তার উত্তাল নৃত্য দেখে মুগ্ধ হন তরুণ সূর্যশেখর। তারপর চন্দ্রমুখীকে পাওয়ার জন্য ঘর ছাড়েন তিনি। ‘নদীমাতা অপেরা’ দলে যোগ দেন। সূর্যশেখর চন্দ্রমুখীকে বিয়ে করতে চান জেনে চন্দ্রমুখীর পালকপিতা ‘নদীমাতা অপেরা’র অধিকারী সৌখিন রায় তাকে পাঠ শিখে নায়ক হওয়ার শর্ত দেন। সে শর্ত পূরণের জন্য সূর্যশেখর আত্মনিবেদন করে। পরবর্তীকালে তিনি ‘নদীমাতা অপেরা’র মঞ্চ কাঁপানো নায়ক হয়ে ওঠেন। কিন্তু অধিকারী সৌখিন রায় নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে চন্দ্রমুখীর সাথে সূর্যশেখরের বিয়ে দিতে তালবাহানা করেন। ফলে সূর্যশেখর এক রাতে চন্দ্রমুখীকে নিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যান। চন্দ্রমুখীকে বিয়ে করেন। স্বামী-স্ত্রী সেখানে জোনাকি অপেরা নামের বিখ্যাত যাত্রাদলে যোগ দেন। কিন্তু চন্দ্রশেখর ভীষণ ছন্নছাড়াÑ বহুগামীও বটে। তিনি কেবল একটি মৌসুম চন্দ্রমুখীর সাথে থাকেন। যাত্রাপালার মরা-মৌসুম শুরু হলে তিনি নতুন যোগ দেওয়া যাত্রাদলের আঞ্জুরানী নামের এক সহ-নায়িকার সাথে বাস করতে থাকেন। পরের মৌসুমে আবার চন্দ্রমুখীর কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু চন্দ্রমুখীকে নিয়ে তিনি কখনো স্থিতু হননি। পরের বছরের মরা-মৌসুমে আবার তিনি আরেক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান। ফলে চন্দ্রমুখী তাকে ডিভোর্স দিয়ে এক অধিকারীকে বিয়ে করে। অন্যদিকে সূর্যশেখর সে সময় ‘আনারকলি’ নামের একপালায় শাহজাদা সেলিম চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয় নায়ক হয়ে ওঠেন। ফলে জোনাকি অপেরার অধিকারী জয়বর্ধন মুখার্জি তাকে দলে আটকে রাখার জন্য সূর্যশেখরের জীবনে অর্থ-নারীর অভাব হতে দেননি। তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করতে থাকেন। কিন্তু একসময় যাত্রাপালার সুদিন শেষ হয়। সূর্যশেখরের বয়সও হয়ে যায়। ফলে তিনি নতুন যাত্রাদলের অধিকারীর নিকট গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন, কাজ হারান। বেপরোয়া খরচের হাত থাকায় একসময় যাত্রামঞ্চের রাজা নিঃস্ব হয়ে যান। অবশ্য সে সময় তিনি একা নিঃস্ব হয়ে যাননি। যাত্রাপালার সুদিন হারিয়ে যাওয়ায় তার মতো শতশত অভিনেতা-অভিনেত্রী নিঃস্ব হয়ে পথে বসেন। ‘রং করা মুখ’ বাংলাদেশের যাত্রাপালার সুদিন ও দুর্দিনের একটি আলেখ্য। এখানে সূর্যশেখরের বৈচিত্র্যময় জীবন-ঘটনার আড়ালে এ জগতের মানুষদের আনন্দ-বঞ্চনার চিত্র উঠে এসেছে।