প্রসঙ্গ কথা এই শতকের গোড়ার দিকে গবেষণাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তারই ধারায় আংশিক সহায়তা পেয়ে আমি ভিখারিদের গানের এই সংগ্রহ শুরু করি। এর জন্য তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে কলা অনুষদের তৎকালীন ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। গান সংগ্রহে আমাদের সম্বল ছিল দুটো মধ্যমমানের মিনি ক্যাসেট রেকর্ডার, ডজনখানেক বিভিন্ন ধরনের অডিও ক্যাসেট এবং কয়েক ডজন ব্যাটারি। সঙ্গে একটি ওয়ানটাইম ক্যামেরা, যা তখন আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছিলেন ভ্রাতৃপ্রতিম জিয়াউল হাসান মান্নান। এর পরের বৃত্তান্ত ভূমিকায় লিপিবদ্ধ আছে। ২০০৫-০৬ সালের দিকে খাতায় লেখা ৭২টি গান কমপোজের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সপারেটর দুর্জয়। বছরখানেকের মধ্যে এর দুটো প্রুফও দেখা হয়। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যে দুর্জয় ও কমপিউটারের জটিল সমীকরণে সমস্ত ফাইলটাই উধাও হয়ে যায়। আমি হাল ছেড়ে দিই। অনেক পরে অডিওসহ গানের সংগ্রহটি নিয়ে কথা হচ্ছিল বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের অগ্রজপ্রতিম আবুল হাসনাতের সঙ্গে। তিনি স্বল্প কথায় তাঁর আগ্রহ দেখান। কিন্তু কোভিড-অতিমারি আমাদের কাজ থামিয়ে দেয় এবং পরে আবুল হাসনাতকে চিরতরে আমাদের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়। কিছুদিন আগে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর আগ্রহে ভিখারির গানের পাণ্ডুলিপি নিয়ে আবার কাজ শুরু করি। অডিও টেপ থেকে বর্তমান পাণ্ডুলিপির অনুলিখন আমার গবেষক-ছাত্র শাহনেওয়াজ রিপনের সংগ্রহে সময়ও সে সার্বক্ষণিক আমার সহযোগী ছিল। তাই এই বই যতটা আমার, ততটাই রিপনের। এসব গানের কথা ভিখারি-গায়কদের। আমরা শুধু পুনরুক্তিগুলো বর্জন করেছি। কিছু কিছু শব্দও পরিমার্জন করেছি, যেগুলো নিশ্চিতভাবেই ভুল মনে হয়েছে। তবে গানের বক্তব্য বা বাণীর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। বানান প্রমিত করতে গিয়ে অনেক অভ্যস্ত বানান বাদ দিতে হয়েছে। যেমন নবীর স্থলে নবি। তবে দ্বীনের স্থলে দ্বিন করতে বাধ্য হয়েছি, পাঠে দিন ও দিন একাকার হয়ে যাবে বলে। কয়েকটি ক্ষেত্রে চরণেও সামান্য সম্পাদনা করতে হয়েছে। তাই অডিওর সঙ্গে কোথাও কোথাও তারতম্য মনে হতে পারে। গানগুলোতে ঘটনার বর্ণনা এবং বিধৃত বিশ্বাস-বক্তব্য গায়কদের। সংগ্রাহকের বিশ্বাসের সঙ্গে তা অনেক সময় না-ও মিলতে পারে। গানগুলোর অডিওর মান ভালো নয়। আলোকচিত্রগুলোরও একই অবস্থা। এর কারণ দুর্বল রেকর্ডিং যন্ত্র এবং ওয়ানটাইম ক্যামেরা। তার ওপর অডিও ক্যাসেট ও ফটো নেগেটিভ দুটোরই বয়স এক যুগ পার হয়ে গেছে। তবুও খাঁটি গানের স্বাদ পাওয়া এবং পরিবেশ সম্পর্কে ধারণার জন্য ওগুলো যুক্ত করা হলো। এই বইটি প্রকাশের প্রাক্কালে আমরা ভিখারিদের সন্ধানে আবার কমলাপুর যাই। দুঃখের বিষয়, তাদের মধ্যে জরিনা বেগম ছাড়া কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পূর্বের কথকদের মধ্যে মূল গায়ক কাশেম আলী ও ওমজু মিয়া বেঁচে নেই। কমলাপুরের পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের ভিখারি আবাসও এখন আর নেই।বইটি প্রকাশে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনসের কর্মী ও প্রচ্ছদশিল্পীসহ মুদ্রণের সঙ্গে যুক্ত সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের জন্ম চট্টগ্রামে। বোয়ালখালীর হাওলা অঞ্চলে ১৯৫২ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (১৯৮৬) লাভের পরে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন জাপানোর নাগোইস বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৯০-৯৩)। তাঁর গবেষণামূলক প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ছড়ার ইশকুল (১৯৭৮), ছড়ায় বাঙালী সমাজ ও সংস্কৃতি (১৯৮৮),Comparative Study in Oral Tradition (১৯৯৩) ও Aesthetical Ideas of Gandhi (২০০০)। জীবনীগ্রন্থ রমেশ শীল (১৯৮৭), ফণী বড়ুয়া : জীবন ও রচনা (১৯৯৭) ও রণেশ দাশগুপ্ত (২০১২)। রমেশ শীল : অপ্রকাশিত কবিতাবলী (১৯৮৫), সংস্কৃতি ও উন্নয়ন (১৯৯১), রমেশ শীল রচনাবলী (১৯৯৩),), Culture of Peace (২০০১), Dialogue among Civilization (২০০২), রণেশ দাশগুপ্ত স্মারকগ্রন্থ (যৌথ, ২০০৪), তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিশোর-সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে মিকি মাউস (১৯৭৭), প্যালেস্টাইন (১৯৭৮), ডিজনী নগরে হৈচৈ (১৯৭৯), বাঘের মাসী (১৯৮৯) প্রভৃতি। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক (২০০৭-০৯), জাতীয় যাদুঘরের ট্রাস্টি, ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সদস্য, শিল্পকলা একাডেমী পরিষদ-সদস্য হিসেবে। পালন করছেন বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব। ছিলেন খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ও শিশুকল্যাণ পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক। বিভিন্ন সেমিনার সম্মেলনে যোগদান করেছেন ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, সিংগাপুর, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও আরজেনটিনায়।