কথাসাহিত্যিক দীলতাজ রহমানকে চিনি ১৯৯৭ সাল থেকে, যখন তিনি ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ পত্রিকার সাহিত্যপাতা দেখতেন। এককথায় তাঁকে চেনা প্রায় তাঁর লেখালেখির সমান বয়স থেকে। যদিও চাকরি সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে সব লেখা পড়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যেটাই পড়া শুরু করেছি, সেটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে। এবার তাঁর ‘মহুয়া নূরীন’-এর পাণ্ডুলিপি পাঠের পর আমি এরকম ঘোরাচ্ছন্ন আছিÑ আত্মহননেচ্ছু এক যুবতী রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তার পাশে প্রায় দিনভর বসে আছে। চল্লিশোর্ধ্ব এক পুরুষ তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়িটি যার, পুরুষটি সেই বাড়ির ড্রাইভার। নাম মোহন। মোহন যুবতীকে অন্তত একটি রাত আশ্রয় দেয়ার আশায় সত্তরোর্ধ্ব মহুয়া নূরীনের কাছে আর্জি পেশ করে। এরকম শুরুর পরে বহু ঘটনার স্রোত বয়ে গেছে ‘মহুয়া নূরীন’-এর কাহিনিতে। কিন্তু আত্মহননেচ্ছু যুবতী নার্গিস সে কোন জীবনে ঢুকে শেষ পর্যন্ত মাটি ও ফসলের নেশায় বুঁদ সত্তরোর্ধ্ব এক পুরুষ, যিনি কলেজে শিক্ষকতা করে জীবনের শেষবেলায় এসে পৌঁছেছেন, নার্গিস সেই পুরুষের প্রেমের আশায় ঘোরাবদ্ধ হলো! এই বইয়ের কাহিনির সারসংক্ষেপ লেখা গেল না। তবে আমি বিস্মিত, অতিথি হয়ে বাড়িতে ঢোকা কৃষিবিদ চরিত্রটি তবু তার সমবয়সী মহুয়া নূরীনের প্রতিই প্রবলভাবে আকর্ষিত। সবশেষে এই মনে হলো, রোমান্টিকতা আসলে পরিশুদ্ধ জীবনচর্চারই সারভাগ বা সুগন্ধসার। পাঠক, আপনারা ‘মহুয়া নূরীন’ পড়ুন, ভাগীদার হোন সে সুগন্ধসারের।
দীলতাজ রহমানের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গােপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। মা রাহিলা বেগম, বাবা সূফী ভূইয়া মােহাম্মদ জহুরুল হক। ব্যক্তিগত জীবনে দীলতাজ রহমান আশিক, ফারহানা, ফারজানা , আরিফ- চার সন্তানের জননী। আর এদের বাবা এ.কে ফজলুর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার। ফেনী জেলার সােনাগাজী থানাধীন ধলিয়া মৌলবিবাড়ির বউ দীলতাজ রহমানের শ্বশুর ডাক্তার তফাজ্জল আহম্মদ। শাশুড়ি একই বাড়ির বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মৌলবি আবুল বাসার ওসমান। গণির কন্যা করিমননেসা। দীলতাজ রহমান বিট মাস্কট প্রাইভেট লিমিটেড-এর (সফটওয়্যার ফার্ম) চেয়ারম্যান। কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও, ক্রমে পাঠকমহলে দীলতাজ রহমানের গল্পই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। গল্প নির্মাণে যে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয় তিনি দেন, প্রতিটি গল্পের সাথে জীবনের যে ঘনিষ্ঠতা তিনি ফুটিয়ে তােলেন, তাতে শুধু। ভালােলাগা নয়, পাঠককে অবাক করেও ছাড়েন।