মূলত বইটি রচিত হয়েছে একজন বইপ্রেমী, ভ্রমণপিপাসু মেষপালক ছেলের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা নিয়ে। ছেলেটির নাম সান্তিয়াগো। গল্পের শুরুতেই বর্ণিত আছে মেষপালকের অতি সাধারণ জীবন যাপনের কথা। তার এই সাধারণ জীবন অসাধারণ হয়ে ওঠে একটি স্বপ্ন দেখার পর। সে স্বপ্নে দেখে সুদূর মিশরে তার জন্য অপেক্ষা করছে গুপ্তধন। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার পর সে গুপ্তধনের সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু তার পৃথিবী ভ্রমণের ইচ্ছা ছিলো তাই সে আর বিলম্ব না করে বেরিয়ে পড়ে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। এমন সময় তার পরিচয় হয় নিজেকে সালেমের রাজা দাবী করা এক বৃদ্ধের সাথে যে তাকে হুরিম এবং থুমিম নামক দুটি অমূল্য পাথর দেন। ভেড়ার পাল বিক্রি করে স্বপ্নের পথে যাত্রা করার পরপরই সে ছিনতাইয়ের সম্মুখীন হয় এবং নিজের সব সম্পদ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তাই বলে সে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যায় না। সান্তিয়াগোর এই দৃঢ় মনোবলই ছিলো তার সমস্ত যাত্রার সঙ্গী। সমস্ত সম্পদ হারাবার পর সে এক স্ফটিক ব্যবসায়ীর দোকানে কাজ নেয় এবং এখানে তার বুদ্ধিমত্তার কারণে সেই দোকানদারও উপকৃত হন। অনেকদিন সেখানে কাজ করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে সে আবার নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে। এই যাত্রায় তাকে পাড়ি দিতে হয় দুর্গম সাহারা মরুভূমি। প্রকৃতির ইশারায় এবং নিজের বুদ্ধির সাহায্যে সান্তিয়াগো সাহায্য করে মরুদ্দ্যানে থাকা মানুষদের। এখানে সে তার ভালোবাসার দেখা পায়। ফাতিমা নামক একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে সে। এই অবস্থায় সে তার স্বপ্ন এবং ভালোবাসার মধ্যে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ফাতিমা তাকে আশ্বস্ত করে যে ভালোবাসা কখনোই স্বপ্ন পূরনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এখানেই তার পরিচয় হয় আলকেমিস্ট নামক একজন লোকের সঙ্গে।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।