ভ্রমণ নিয়ে যাঁর প্রথম বইয়ের নাম ছিল 'অজন্তা উর্বশী কোনারক কিন্নরী সেই বর্ষীয়ান লেখক ইশতিয়াক আলমের চতুর্থ ভ্রমণ বইয়ের নাম 'মেঘ পাহাড়ের দেশে"। ভেবেছিলাম, এটি হয়তো মেঘালয় ভ্রমণরচনা। পাণ্ডুলিপিতে চোখ রেখে দেখি জনপ্রিয় এই শিশু ও কথাসাহিত্যিক শুধু মেঘালয় ভ্রমণকে আরাধ্য করেননি এতে, বরং সেভেন সিস্টারস খ্যাত মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা-দেখা চোখে তুলে এনেছেন পাহাড়ি কন্যা মেঘালয়, আসাম, দার্জিলিং ও সিকিমকে। ইশতিয়াক আলমের ভ্রমণকাহিনি মানেই অনেক কিছু - দর্শনীয় স্থানের অনুপুঙ্খ বর্ণনা অনুসন্ধানী ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও লোককাহিনি। বর্ণিত স্থানের অসংখ্য দুর্লভ ছবি ও অসাধারণ বর্ণনায় পাঠক বিচরণ করতে পারবেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। অবহিত হবেন সে-অঞ্চলের ইতিহাস ও উন্নয়নে এক বাঙালি পরিবারের সফল সম্পৃক্ততার কথা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মেঘালয়ের কিছু মানুষের অসামান্য সহযোগিতার কথা। আমাদের বাহান্নজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এখনো শায়িত আছেন শিলংয়ের মুসলমান কবরস্থানে। এই বই পড়তে পড়তে পাঠক মানসভ্রমণ করতে পারবেন আসামের ভীতি-কুহক-রোমাঞ্চ ও রহস্যঘেরা কামরূপ কামাখ্যা, প্রাগজৌতিষপুরের গোলাপি গম্বুজের নবগ্রহ মন্দির, দার্জিলিংয়ের অপূর্ব নিসর্গ এবং সিকিমের গিরিসংকুল পথ পাড়ি দেওয়ার রোমাঞ্চ। বইটির আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবচেয়ে বেশি পঠিত ও আলোচিত 'শেষের কবিতা'র প্রকৃত নায়ক-নায়িকা বর্ষীয়সী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অপূর্ব দেহবল্লরীর ষোড়শী রাণুর জিভূম বাড়িতে কাটানো চল্লিশ দিন। পড়তে গিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠবে ঢেউ খেলানো পাহাড়শ্রেণির মাঝেঝ পাইনগাছে ঘেরা রিলবংয়ের নির্জন পথে ভানুদার হাত জড়িয়ে ধরে তার গা-ঘেঁষে পদচারণারত অমিত ও লাবণ্যকে।