মোহাম্মদ আনোয়ার। হালের কবিতায় নিভৃতচারী নাম। তবে কবিতার সাথে তাঁর বসাবাস নিবিড়। ‘পাখির পালকে কাশবন’ এই কবির দ্বিতীয় কাব্য। কবিতাকে তিনি সহজেই পাঠকের মর্মমূলে পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। উল্লম্ফন নেই। তিনি তাঁর মতো। নিবেদিত কবিতা পথের পর্যটক। তাঁর কাব্য-কারিশমা ধীর-স্থির শান্ত প্রবাহ এক অনির্বচনীয় আঙুল ধরে কবিতাকে নিয়ে যায় শিল্পের কোঠাঘরে। যেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ব্যক্তিগত গ্রাম-জনপদ, ফেলে আসা বর্ণিল উঠোনের শীতল ছায়া। যে জনপদ, যে ছায়া বর্তমানের ব্যক্তি ও সমষ্টি স্পর্শ করার জন্যে আকুল আগ্রহে পেছন ফিরে তাকিয়ে থাকেন। কবি ব্যক্তি ও সমষ্টির এই গোপন দহন অনুভব করেন পেঙ্গুঈন চোখে। লিখেনÑ ‘উড়ে গেলো দূরে কোথায় মৌমাছি সকাল/ শুকালো গোপন কলি অযুত নিযুত/ জীবন মানে তবে জলন্ত সিগেরেটের ধোঁয়া?’ দিকচিহ্নরহিত জটিল গ্রন্থির বন্ধন মানেই কবিতা নয়। কবিতা লাস্যময়ী রমণীর লাজুক হাসি, আবার হতে পারে দূর থেকে ভেসে আসা ডাহুক পাখির গান। যে হাসির চিকন কলস্বরে, যে গানের সুর-মাধুর্যে পাঠক সহজেই উৎকর্ণ হওয়ার প্রয়াস পান এবং সে সবের উৎসমূলে অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠেন। মোহাম্মদ আনোয়ার কবিতার এই রহস্যাবৃত ক্যানভাসে দৃঢ় পা ফেলার ক্ষমতা রাখেন। নগরকেন্দ্রিক অস্থির চেতনা, পাশাপাশি নাড়িপোতা নিস্তরঙ্গ পল্লির স্নিগ্ধ উঠোনের মায়ার বন্ধন তাঁর কবিতায় উপজীব্য হয়ে উঠেছে। নাগরিক জীবনের মিছে মচ্ছব নয়, তিনি সময় ও সভ্যতার মাঠে ফলাতে চান ‘তুমি যেমন আছো তেমনি এসো’ এই অকৃত্রিম নৈসর্গিক জীবনবোদের সংস্কৃতি। এখানেই আনোয়ারের স্বাতন্ত্রবোধের বিজয় পতাকা ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে উচ্চকিত। ‘পাখির পালকে কাশবন’ দ্বিধাহীন বলা যায় কাব্যরসিকদের কাঙ্খিত অনুষঙ্গ শুভ্রতায় মোড়ানো এক সমুজ্জ্বল কাব্যের নাম।
কবি মোহাম্মদ আনোয়ার। পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ, মাতা মরহুমা আয়াতুন নেছা। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামে ৫ জানুয়ারি ১৯৭০ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী।