গােপাল ভাড় ছিলেন মধ্যযুগের মজার এক মানুষ । সুরসিক এই লােকটি নদীয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত রম্য গল্প বলিয়ে, ভাড় ও মনােরঞ্জনকারী হিসেবে বিশেষ পরিচিত আলােচিত। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে নিজ গুণে নদীয়া জেলার খ্যাতিমান রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ্যসভায় নিযুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। রাজার অন্যতম সভাসদ ছিলেন গােপাল। সেই আমলে কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের সামনে নির্মিত হয়েছিল তার একটি ভাস্কর্য। দুই শ বছরের বেশি সময় ধরে রসে টইটম্বুর ও শিক্ষণীয় তার গল্পমালা প্রচলিত ও ব্যাপকভাবে জন-আদৃত। লােকসাহিত্যে এসব গল্প স্বমহিমায় দাপটের সঙ্গে টিকে আছে। প্রবাদের মত মর্যাদা পেয়ে গেছে। কোনাে কোনাে গল্প। তাঁকে মােল্লা নাসিরুদ্দীন হােজ্জা ও বীরবলের সঙ্গে তুলনা করা হয় । গােপাল ভাঁড় নামের চরিত্রটি ঐতিহাসিক। এই নামে আদৌ কেউ ছিলেন কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক সংশয় রয়েছে। তা থাকুক, সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তার গল্প যে শিল্পমানে উত্তীর্ণ, জনসাধারণের অতি প্রিয় ও উপভােগ্য , তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। এসব গল্পে রয়েছে বুদ্ধির উজ্জ্বল দীপ্তি, কৌতুকের ঝিলিক, বঞ্চিত লাঞ্ছিত নিপীড়িত মানুষের সপক্ষে বক্তব্য, অকৃত্রিম মানবিক মমতা ও দরদের বিশ্বস্ত ও মনােগ্রাহী প্রতিফলন। বাংলাপিডিয়া কী বলছে? গােপাল ভাড় সম্পর্কে সেখানে বলা হয়েছে : “গােপাল ভাঁড় বিখ্যাত হাস্যরসিক ও ভঁড়, যিনি হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে অন্যদের আনন্দ দিতেন। বাংলার লােকসংস্কৃতিতে তার একটি বিশেষ স্থান আছে। তিনি নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের (১৭১০-১৭৮৩) সভার অন্যতম সভাসদ ছিলেন বলে কথিত হয় । গােপাল ছিলেন খুব বুদ্ধিমান এবং তার উপস্থিত বুদ্ধি ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে রাজাকে সর্বদা খুশি রাখতেন এবং তাৎক্ষণিক যে-কোনাে ব্যাপারে বাস্তব ঘটনাশ্রিত গল্পের মাধ্যমে গভীর শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরতেন। কিন্তু গােপাল ভাঁড়ের কোনাে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি নেই। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্ব সম্পর্কে ইতিহাসে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেলেও তার কোথাও উল্লেখ নেই যে, তাঁর সভায় গােপাল নামে একজন ভড় ছিলেন।...”
হাসান হাফিজের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁও উপজেলার এলাহি নগর গ্রামে, ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। পড়াশােনা করেছেন হােসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য,গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ.(ডাবল)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। দৈনিক বাংলায় সূচনা। আরাে কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (এখন পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন এবং আমার দেশ-এ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ১৪০। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই লেখক পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার সৌহাদ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ঢাকা রিপাের্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, কবিতালাপ পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, স্বপ্নকুঁড়ি পদক ইত্যাদি। হাসান হাফিজ বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) সাধারণ সম্পাদক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। সাহিত্য-সাংবাদিকতা সূত্রে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫ দেশ। তার স্ত্রী শাহীন আখতার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।