মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় অধিপতির নাম হচ্ছে জালালউদ্দিন মুহম্মদ আকবর (১৫৪২-১৬০৫)। তার শাসনকালের শুরু হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে । সম্রাট আকবরের নবরত্ন সভার একজন ছিলেন মহেশ দাস নামের তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন এক ব্রাহ্মণ । সম্রাট তার উপাধি দিয়েছিলেন রাজা বীরবল'। জ্ঞানী, কৌতুকপরায়ণ,ব্যঙ্গনিপুণ, সুরসিক বীরবল ছিলেন সবার প্রিয়। সম্রাট তাকে ভীষণ পছন্দ করতেন। কবি ও সংগীতজ্ঞ হিসেবেও বীরবল বেশ সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যকৌতুক, সরস উঁচুমানের রঙ্গ রসিকতার গল্পমালা কাল থেকে কালে আদৃত হয়ে আসছে। সকল বয়সের মানুষ তার গল্প পাঠান্তে নির্মল আনন্দ উপভােগ করে থাকেন। উদারচিত্ত, গুণী এই মানুষটি সবসময়ই ছিলেন সাধারণ, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। সাধ্যমত উপকার করেছেন তাদের। বীরবলের কৌতুকের বিদ্রুপবাণে খােদ সম্রাটও অনেক সময় জর্জরিত হতেন। প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সুবাদে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান তিনি দিতে পারতেন। তাঁর রসবােধ ছিল অতুলনীয়। বীরবলের জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের টিকওয়ানপুর গ্রামে । ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয় সােয়াতে (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত)। সেখানে উপজাতীয়দের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান। গােড়ার দিকে ম্রাট আকবরকে হাস্যরস-কৌতুকে বিনােদিত করলেও পরবর্তীকালে তাকে সম্রাটের নির্দেশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে পাঠনাে হতাে। বীরবলের মনােগ্রাহী গল্পমালা এমনই উপভােগ্য ও শিক্ষণীয় যে, আপন মাহাত্ম্যেই এসব বহু কাল ধরে টিকে আছে। জননন্দিত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেও। এগুলাে নিয়ে অজস্র নাটক, চলচ্চিত্র , কমিকস, এ্যানিমেশন হয়েছে। কোনাে কোনাে পাঠ্যবইতে পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শিল্পসুষমায় মণ্ডিত, মানবিক গুণে গুণান্বিত এসব গল্প গােটা বিশ্বেরই এক অহস্কৃত পেলবসুন্দরএক সম্পদ। এতে কোনাে সন্দেহ নেই।
হাসান হাফিজের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁও উপজেলার এলাহি নগর গ্রামে, ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। পড়াশােনা করেছেন হােসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য,গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ.(ডাবল)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। দৈনিক বাংলায় সূচনা। আরাে কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (এখন পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন এবং আমার দেশ-এ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ১৪০। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই লেখক পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার সৌহাদ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ঢাকা রিপাের্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, কবিতালাপ পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, স্বপ্নকুঁড়ি পদক ইত্যাদি। হাসান হাফিজ বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) সাধারণ সম্পাদক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। সাহিত্য-সাংবাদিকতা সূত্রে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫ দেশ। তার স্ত্রী শাহীন আখতার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।