‘আমি রাজনীতিক নই’- এমন কথা রবীন্দ্রনাথ বহুবার নানা সময়ে বিভিন্নভাবে বলেছেন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি ও কর্মে রাজনীতি এসেছে, বেশ ভালোভাবেই এসেছে। এসেছে বলেই তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেই তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে শচীন্দ্রনাথ সেন লিখেছিলেন Political Philosophy of Rabindranath বইটি। যার প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত’। যে কালে রবীন্দ্রনাথের জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং বিচরণ, সেটি ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের নিগঢ়ে আবদ্ধ ভারতবর্ষের এক উত্তাল সময়। স্বাভাবিক কারণেই তাঁর লেখায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে অনেক মতামত। এগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত বা রাজনৈতিক দর্শন। তাঁর জীবনকাল থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর এই মত বা দর্শন নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। জানামতে, আর কোনো সাহিত্যিকের রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে এত কথাবার্তা হয়নি। এটি হওয়ার যৌক্তিক কারণও আছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অপার বীক্ষা দিয়ে সেই সময়ের সমাজকে দেখেছেন, রূপায়ণ করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন এবং সেখান থেকে এগিয়ে যাবার পথও দেখিয়েছেন। সেই পথ ও মতকে নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা সমালোচনা আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে এবং এটা বলাই যায়, ভবিষ্যতেও হবে। ‘নো-নেশন এবং রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি’ একটি চিন্তা উদ্রেককারী গ্রন্থ। প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিরূপে দেশসেবা তথা শাসকরূপে ক্ষমতার অধিকার লাভ করার বাইরেও যে শাসকগোষ্ঠীর ক্রিয়াকর্ম ও স্বার্থসিদ্ধির পথকে উপলব্ধি করা যায়, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের রাজনীতিসংক্রান্ত প্রবন্ধসমূহ আনুপূর্বিক পাঠে ও রবীন্দ্রনাথের অনন্যসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীকে যারা বিশ্লেষণ করে লেখালেখি করেছেন তাদের মতামতকে ধারণায় এনে এ বইটি রচিত হয়েছে। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের কালকে উপলব্ধির মধ্যদিয়ে ভবিষ্যতের সমাজ গঠনের যে ইঙ্গিত রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন, বইটি আনুপূর্বিক পাঠে তা যথার্থভাবে উপলব্ধি করা যাবে বলে আশা করা যায়।