"রাজনৈতিক প্রবন্ধ সমগ্র" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ হুমায়ুন আজাদ, শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে বহমান এক জনগােষ্ঠীর ভেতরে থেকেও কাটিয়েছেন জোতির্ময় জীবন। দেখেছেন রুগ্ন ব্রাজনীতির রােষানলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বাঙালির শরীর ও মন। তার ভাষা ও প্রতিষ্ঠান, তার সমাজ ও রাষ্ট্র। তার সামাজিক, রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও শৈল্পিক জীবনে। অন্ধকারের মত ধেয়ে আসছে ভয়াবহ স্থবিরতা। এই পারিপার্শ্বিক জীবনের গভীর হতাশা থেকে প্রশ্ন। তুলেছেন, “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?” যেখানে বাকস্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানবাধিকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। হুমায়ুন আজাদ ব্যক্তিস্বাধীনতার উদ্ধত অহমিকায় দুবৃত্তায়িত ক্ষমতাকে কেন্দ্রের উন্মুক্ত তরবারির নিচে মাথা রেখে বিক্ষোভ তুলেছেন বর্ণমালায়। তাঁর রাজনৈতিক প্রবন্ধাবলীতে তাঁর চারপাশের দুঃশাসন, দারিদ্র, দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, ধর্মীয় উন্মাদনা, ক্ষমতা ও অর্থ গৃপ্লদের উন্মত্ততা এবং শিল্প-সাহিত্যের বিকলগ্রস্থতার কথা বর্ণনা করেছেন বিক্ষুব্ধ ভাষায়। অবসান চেয়েছেন, এই সব মানবাধিকারহীন নিপীড়ন ও বর্বরতা ও বর্বরতার নিরঙ্কুশ উল্লাসে ভরা অন্ধকারময়তার।
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।