প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।... তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।।” ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে রমনার ঘোড়দৌড় মাঠে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য উক্তি উপরের দুটি বাক্যাংশ। অন্তত আমি তাই মনে করি। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা ও নেতার দিক থেকে দিগ্নির্দেশনা উক্ত দুটি বাক্যে পরিপূর্ণভাবে উজ্জ্বল। সাড়ে সাতকোটি বাঙালি, যার যার অবস্থান থেকে যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশের জন্য স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। ৭১-এর সেই গেরিলা যুদ্ধে তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির রোজনামচা বিষয়ে ডা. রেজাউল হকের এই গ্রন্থ ’একাত্তরে এক মেডিকেল ছাত্র’। ১৯৭১ সালে রেজাউল হক ডাক্তারি বিদ্যার তৃতীয় বর্ষে। শরণার্থী হিসেবে উত্তর বঙ্গের সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে আলবদর রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, ও গুলিতে আহত হাজার হাজার মৃত্যুপথযাত্রীর চিকিৎসায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেদিনের তরুণ রেজাউল হক। নয়মাস ধরেই এই নিবেদিত প্রাণ ছাত্র চিকিৎসক নিজের আশ্রয়, সুখ-সাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে একশতভাগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে অসহায় মানুষকে সুস্থ করেছেন-সাহস জুগিয়েছেন । অন্যদিকে তাঁর এই রোজনামচায় মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য, ঘটনা, দুই দেশের সাধারণ মানুষ থেকে পেশাজীবীদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার কথা নিবিড়ভাবে অবলোকন করে - তার যথাযথ বিবরণ, পরিসংখ্যান, বিভিন্ন সংস্থার ও ব্যাক্তিবিশেষের বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সহমর্মিতার বিষয়ে তাঁর মতামত ও অনুভূতিকে উল্লেখ করে ডা. রেজাউল হকের ’৭১ এর এই যুদ্ধ-অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য তথ্য স্বাধীনতা ইতিহাসের উপাত্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।