বাঙালির সৃষ্টিশীলতার শিখরস্পর্শী অভিব্যক্তির এক অমীমাংসিত নাম রবীন্দ্রনাথ। তার দিকে তাকিয়ে বাঙালির মুগ্ধতার কোনো শেষ নেই। এমন সর্বজয়ী প্রতিভার আবির্ভাব কীভাবে সম্ভব হলো এককালের কূপমন্ডূক বাঙালির সীমাচিহ্নিত ভৌগোলিক ও মানসিক বৃত্তে? কী সেই ব্যাখ্যাতীত অনুঘটনা, যা বাঙালির এক সৃষ্টিশিশুকে জগৎশ্রেষ্ঠের সম্মান এনে দিল? এ প্রশ্নের উত্তর না সর্বগ্রাহ্য, না সহজগ্রাহ্য। কেননা রবীন্দ্রনাথ তার সমকালে কেবল বাংলার বা ভূ-ভারতের নন, সারা পৃথিবীরই সর্বাধিক বহুমুখী স্রষ্টা। এধরনের ব্যক্তিপ্রতিভাকে প্রকৃতির অব্যাখ্যাত কূটাভাস হিসেবে মেনে নিলেই বরং ঝামেলাটা চুকে যায়। প্রায়শ এমনটাই আমরা করে থাকি। ফলে তার অগণন দৃষ্টিমুখ ও সৃষ্টিমুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কোনো রবীন্দ্রপাঠক যতটা আবিষ্ট ও সম্মোহিত, প্রশ্নমুখর হতে প্রায় ততটাই কুণ্ঠিত। সৌভাগ্য, এই বাংলাদেশে এরকম ভিন্নতা-সন্ধানী কিছু সমীক্ষা শুরু হয়েছে আমাদের কবিসার্বভৌমকে নিয়ে। স্বেচ্ছানিযুক্ত তৃণাভিসারী গবেষক আখতার উদ্দিন মানিক প্রণীত জোড়াসাঁকো থেকে শাহজাদপুর শীর্ষক গ্রন্থটি পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো, এই গবেষক রবীন্দ্রনাথের দেবসত্তার চেয়ে মানবসত্তাকেই অধিকতর গ্রাহ্য ও ব্যাখ্যাযোগ্য বলে মেনেছেন। এই পাঠ মানুষ-রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি স্রষ্টা-রবীন্দ্রনাথের ঘটনামাফিক বিকাশের বাস্তবতাশাসিত, বলা যাক, পরিবারসম্মত পাঠ। একজন জমিদারনন্দন কীভাবে বৈষয়িকতার কাঠিন্য আত্মসাৎ করে সৃষ্টিশীলতার আলোকময়তায় বহুবিচ্ছুরিত হলেন, তারই কিছু ইতিহাসাশ্রয়ী তথ্য রসাত্মকভাবে পরিবেশন ও বিশ্লেষণ করেছেন এই সমীক্ষক।
Akhter Uddin Maneek - জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৩, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। মাতা উম্মে সা’দত নূর খাতুন। পিতা আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া। লেখাপড়া সিরাজগঞ্জ এবং ঢাকায়। বাংলা ও ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। পিএইচডি করেছেন ইতিহাসে-‘ঊনবিংশ শতাব্দীতে শাহজাদপুরে ভূমি আন্দোলন ও ঠাকুর জমিদার প্রতিক্রিয়া’। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২১। ইতিহাস গবেষণা তার প্রিয় বিষয়।