‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক’ গ্রন্থের জন্য ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ পেল বেঙ্গল পাবলিকেশন্স । আবুল হাসনাত-সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক’ গ্রন্থের জন্য ২০২২ সালের ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। গ্রন্থের গুণগত মান ও শৈল্পিক বিচারে প্রতিবছর এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। বুধবার ১৬ মার্চ বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এপার-ওপার বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের লেখায় নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কারের এক অনন্য গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক’। গ্রন্থটির সম্পাদক আবুল হাসনাত ছিলেন সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলমে’র প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক এবং বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের নির্বাহী পরিচালক। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কালি ও কলম যে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিলো, তার গদ্যাংশ নিয়ে স্মারকরূপে এই গ্রন্থ প্রকাশ হলো। বঙ্গবন্ধু যখন ছাত্র, তখনই রাজনীতিতে তাঁর দীক্ষা হয়েছিল। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রনেতা হিসেবে মানুষের মঙ্গল-আকাঙ্ক্ষার জন্য যে অঙ্গীকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তা সমগ্র জীবনের রাজনৈতিক কর্মেই প্রতিফলিত হয়েছিল। দেশবিভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের শোষণ ও বঞ্চনা লক্ষ করে প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিলেন নতুন এক সংগ্রামী দল গঠনের। সে-দলটি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিরতিহীন সংগ্রাম করেছে এবং এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধের এক পথ নির্মাণ করেছে আর তাঁরই নির্দেশে ও প্রণোদনায় মুক্তিযুদ্ধ সফলতা অর্জন করেছে। ছয় দফা দাবি প্রণয়ন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের মহত্তম কাজ। এই দাবিসমূহের মর্মে ছিল এই অঞ্চলের অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শোষণ-বঞ্চনার অবসান। সে-সময়ে এই দাবির সমর্থনে সমগ্র দেশে যে-জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল অভূতপূর্ব। সেজন্য বঙ্গবন্ধু ও ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাঁকে হত্যা করার প্রয়াস গ্রহণ করেছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ আজ যথার্থই বিশ্ব-ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার পর যে-মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল দেশের মানুষ তাতে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন প্রধান প্রেরণা। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে আর তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করায় রাষ্ট্র ও সমাজের অগ্রগতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল তা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। আমরা এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর বহুমুখী রাজনৈতিক কর্মধারা, বাঙালিত্বের সাধনা, অসাম্প্রদায়িক বোধ প্রসারে অঙ্গীকার, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন, মানবিকতা এবং নবগঠিত রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজনির্মাণের জন্য যে-দিকনির্দেশনা তিনি দিয়েছিলেন। সে-সম্পর্কে আলোচনায় প্রয়াসী হয়েছি। এছাড়া তিনি বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যেরও একজন অনুরাগী ছিলেন—এ-কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তাঁর মহান হৃদয়তা, ব্যক্তিত্ব ও বিশাল রাজনৈতিক কর্মধারার তুলনায় এ প্রয়াস যৎসামান্য। তবু আন্তরিকতার সঙ্গে এর বাস্তবায়নে প্রয়াসী হয়েছি। উক্ত গ্রন্থে সম্মানিত লেখকগণের বয়সানুক্রমে রচনার ক্রম করা হলো। গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশে কয়েকটি প্রবন্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর সাতটি অসামান্য ভাষণ পুনর্মুদ্রিত হলো। আবুল হাসনাত ঢাকা
আবুল হাসনাত কবি ও সাংবাদিক। তিনি মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লেখেন। তাঁর জন্ম ১৭ জুলাই ১৯৪৫ সালে পুরনো ঢাকায়। ষাটের দশক থেকে কাব্যচর্চার সূত্রপাত। ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ষাটের দশকের প্রতিবাদ ও সংগ্রামমুখর জীবনের প্রতিচ্ছবি যেমন তাঁর কাব্যবিশ্বাসে জায়গা নিয়েছে তেমনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিজনিত আনন্দ-বেদনা, অস্থিরতা, নৈরাশ্য ও সংকটময় মুহূর্তগুলিও তাঁর বোধে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। সবকিছুর অন্তরালে ক্রোমন্টিক কাব্যধারারও প্রবল স্রোত তাঁর চেতনায় নীরবে বয়ে গেছে। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: 'জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক', 'কোনো একদিন ভুবনডাঙায়', 'ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল' ও 'নির্বাচিত কবিতা'। প্রবন্ধগ্রন্থ: 'সতীনাথ, মানিক, রবিশঙ্কর ও অন্যান্য' ও 'জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য'; শিশু ও কিশোরদের নিয়ে রচিত গ্রন্থ: 'ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়', 'টুকু ও সমুদ্রের গল্প', 'যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর', 'রানুর দুঃখ-ভালোবাসা'; কিশোর জীবনী : 'জসীমউদ্দীন', 'চার্লি চ্যাপলিন', 'সূর্যসেন', 'কিশোরসমগ্র' এবং 'প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য'। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক 'সংবাদে'র সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন। একসময় বাংলাদেশের সাহিত্যের দর্পণ হয়ে উঠেছিল সংবাদ সাময়িকী। বর্তমানে সাহিত্যপত্রিকা 'কালি ও কলমে'র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে চিত্রকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক 'শিল্প ও শিল্পী'র তিনি সম্পাদক। ১৯৮২ সালে টুকু ও সমুদ্রের গল্পে'র জন্য পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার। ২০১৪ সালে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো।