আমার ৭৮ বছরের জীবনে ৬০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিচরণ করেছি নাটকের ভূবনে শিল্পের অন্বেষনে। সেই কোন ছোটবেলা যখন বয়স ছয় কি সাত আমার বাবা আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন নাটকের মঞ্চে। দাঁড় করিয়ে দিলেন স্পট লাইটের সামনে। সেদিনই সেই স্পট লাইটের আলো আমার দু’চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে আমাকে যাদু করে ফেললো এবং তারপর থেকে কেবলই আমাকে ডাকতে লাগলো মঞ্চের পানে। কিন্তু তখনও তো আমি বড়ই হইনি। আমার অনেক লেখাপড়া বাকি। তাই সেই ডাকে সাড়া দিতে কিছুটা সময় লাগলো। যখন স্কুলের গন্ডি পার হয়ে কলেজে ভর্তি হলাম তখন কলেজের বার্ষিক নাটকে ঢুকে পড়লাম। এরপর ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে/প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলাম, তখন বিশ^বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতির জগতে আমার প্রবেশ ঘটলো। ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশুনা এবং বার্ষিক নাটকে নিয়মিত অভিনয় পাশাপাশি চলতে লাগলো। আমার মাঝে দুইটি সত্বা পাশাপাশি বেড়ে উঠতে লাগলো, ইঞ্জিনিয়ার এবং অভিনেতা। যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকুরী করতে শুরু করলাম তখনও দুটি সত্বার সহ-অবস্থান আমার মধ্যে চলতেই থাকলো। ইতোমধ্যে ভালোবেসে যাঁকে বিয়ে করলাম তিনিও ্একজন নাট্যশিল্পী, ব্যাস। শিল্পের ভূবনে পাকাপাকি বাঁধা পড়ে গেলাম। ইঞ্জিনিয়ারের চাকুরী করি আবার স্ত্রীকে নিয়ে সখের নাটকও করি। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কর্মস্থল ছেড়ে আত্মগোপন করে থাকলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নবনাট্য আন্দোলন শুরু হলো। যোগ দিলাম সেই আন্দোলনে আতাউর রহমান ও আলী যাকেরের নেতৃত্বে। সহযোদ্ধা পেলাম আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, সারা যাকের, প্রমুখকে। যথারীতি আমার স্ত্রী রওশন আরা হোসেন আমার পাশে। এবার আর সখের নাটক নয়। দর্শনীয় বিনিময়ে নিয়মিত নাটক, নাট্য মঞ্চে শিল্পের অন্বেষণ।