কবিতা লেখার বয়স খুব বেশি দিন নয় কবি আমান কবিরের। যদিও, ছোটবেলা থেকে ছড়া, গল্প ইত্যাদি লেখার প্রতি একটা ঝোঁক ছিল, তবে কবিতাকে ভালো করে মন-মগজে ঢুকিয়ে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেন ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে। তখন তাঁর বয়স চলছিল ২৭-২৮। সাধারণভাবে দেখতে গেলে, বেশিরভাগ তরুণ কবি-ই কবিতা লেখা শুরু শুরু করেন আরো বেশ খানিকটা আগে থেকে। তবে, কবিতা লেখা গভীরভাবে শুরু করার আগে কবি নিজেকে কবি হিসেবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছেন – দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কবি – সুকান্ত ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাশ, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজ, মহাদেব সাহা, কাহলিল জিব্রান, নাজিম হিকমেত, পল আরাগ প্রমুখের কবিতা পড়ে। তাদের কবিতা লেখার ধরন, শব্দচয়ন, অন্তর্গত বাণী ও চেতনা গভীরভাবে খেয়াল করার চেষ্টা করেছেন। তাদের কবিতার যে সহজবোধ্যতা ও সরলতা রয়েছে, তারা যেভাবে বক্তব্য ও চেতনা-নির্ভর কবিতা লিখেছেন, সেগুলো কবিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই, তার কবিতার ভাষাটাও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সহজ-সরল, আর এভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন বক্তব্যের প্রচণ্ডতা। আজকের বেশিরভাগ তরুণের যেখানে পরাবাস্তব ঘরানার কবিতা লেখার ঝোঁক রয়েছে, সেই তুলনায় আমান কবিরেরে কবিতাগুলো বেশ খানিকটা ভিন্নতর। আজকের তরুণদের কবিতায় ‘প্রেম, পরাবাস্তব ও প্রকৃতি’, এই তিনটি বিষয়ের প্রাধান্য থাকে। সেখানে কবির কবিতায় বেদনা ও বিদ্রোহ (দুই ‘ব’) এবং দেশ ও দ্রোহ (দুই ‘দ’) – এইদুটো বিষয়ের প্রাধান্য রয়েছে। তবে, তাঁর কবিতার অন্যতম মূল শক্তি হলো এর ‘বিষয়-বৈচিত্র’। প্রেমের কবিতাও লিখেছেন বেশ কটি। লিখেছেন এমনকি পরাবাস্তব কবিতাও (যেমন, ‘তুমিহীনা শূন্যতা’ কবিতায়)। তাঁর কিছু কবিতায় প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষকে বা সমাজের অপশক্তিকে রসবোধের মাধ্যমে খোঁচা দেয়ার একটা ব্যাপারও খুঁজে পাবেন (যেমন, ‘জ্বলে অপরাজেয়-২’ ও ‘তারিশী, তোমার জন্য’ কবিতায়)। আর একটা বৈশিষ্ট্যও অনেকে পাবেন। সেটা হলো সিরিজ কবিতা, তাও আবার একই নামে -১,২,৩ – সংখ্যা দিয়ে যেগুলো চিহ্নিত (যেমন, বোন আমার ১, বোন আমার ২; জ্বলে অপরাজেয় ১, জ্বলে অপরাজেয় ২; একজন একলব্য ১, একজন একলব্য ২ কবিতাগুলো)। আর সর্বোপরি, বর্তমানে আমাদের তরুণ কবিদের মধ্যে যেখানে সামাজিক অন্যায়-অনাচার, রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কবিতা লেখার অভ্যাসটা অনেক অনেক কমে গেছে, সেখানে আমান কবিরের দ্রোহ, দেশপ্রেম ও মানবতাবোধের কবিতাগুলো অনেকটাই স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছে। কবি মনে করেন, বর্তমানে এই সময়ে আমরা নিজেরা, আমাদের শুভ ইচ্ছাগুলো, আমাদের স্বপ্নগুলো যেন বারবার কঠিন সময়ের কাছে, বিরুপ পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে হেরে যাচ্ছে বারবার। অথচ, সেগুলোর জয় হলে আমরা, আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, আমাদের পৃথিবী— জয় হতো সবার। এমন একটা সময়ে আমরা হেরে যাচ্ছি, যখন দূরন্ত ঘোড়ার মতো ছুঁটে আমাদের স্বপ্নগুলোর ছুটে বেড়োনো উচিত। তাই কবিতা লিখতে গিয়ে কবির কবিতার অনেকগুলোই হয়ে ওঠে বেদনার কবিতা, পরাভবের কবিতা; তাই বইয়ের নামও ‘অসময়ের পরাহত’।