সম্ভবত চীনের উত্থানের বর্তমান এবং কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনার মতো অন্য কোনো বিষয় বর্তমানে আর একটিও নেই। শুধুমাত্র বেইজিং এবং এর উচ্চশ্রেণির শাসকদের ভবিষ্যতের জন্যই নয়, ভারতসহ এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার জন্যও বিষয়টি সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিঙের উচ্চাভিলাষ সম্পর্কিত ধারণা আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিঙের উচ্চাভিলাষের একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। আর তা হলো চীন অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিকক্ষেত্রে হাঁটি হাঁটি করে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের গন্তব্যে পৌঁছাতে শুরু করেছে। যে কারণে অনেক পশ্চিমা দেশে এবং অ-পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশে চীন সম্পর্কে সন্দেহ বেড়েই চলেছে। সেটা চীনবিরোধী মনোভাব নয়। এমনকি কিছু কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দেশেও চীন নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছেই। যদি পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়াই চীনের লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে সেটা অর্জনে চীন দুটি পথ অবলম্বন করতে পারে। প্রথমটি হলো চীনের চারপাশে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত অঞ্চলের মাধ্যমে। চীনের বৈশ্বিক শক্তি হয়ে উঠতে আঞ্চলিকভাবে মুখ্য হয়ে উঠতে হবে। দ্বিতীয় পথটি কঠিন ও জটিল। এটা করতে হলে চীনকে চিরাচরিত কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক নিয়মগুলি অস্বীকার করতে হবে। এই উদ্যোগটিতে বৈশ্বিক স্তরে চীনের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পট পরিবর্তনের দিকে আলোকপাত করা হয়েছে। চিরাচরিত জ্ঞান দিয়ে বিচার করলে এটাই উঠে আসে যে চীন আঞ্চলিক প্রাধান্য বিস্তারের মাধ্যমে বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হতে চেষ্টা করছে। চীন যে অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে তা দক্ষিণ এশিয়া এলাকায় তাদের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, ইউরেশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় চীন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এমনকি উত্তর ও মধ্য আমেরিকাও চীনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। চীনের বৈশ্বিক অভিলাষ : একটি বাস্তবতা নিরীক্ষণ ৮ কিন্তু চীনের বৈশি^ক এই সম্প্রসারণবাদী বিশাল প্রকল্প এবং ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মহাদেশগুলোতে নেতিবাচক মনোভাব শুরু হয়েছে। চীনের অভ্যন্তরে মানবাধিকার রেকর্ড পরিস্থিতি এমন যে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরের দেশগুলোতেও এমন মানবাধিকার পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বহুগুলো দেশকে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তার বদলে বরং ঋণের কঠিন ফাঁদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চীনের সেনাবাহিনী প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাধ্য করছে তাদের প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে। কয়েকটি ক্ষেত্রে চীনের সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। চীনের কায়কারবার প্রায়শই তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। চীনের এসব নানা উচ্চাভিলাষ ও বাস্তবায়ন চেষ্টা নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রকাশনী ‘চারদিক’ এবং ভারতের প্রথম সারির প্রকাশনী হার-আনন্দ যৌথভাবে বিভিন্ন মহাদেশের ১২ জন বিশেষজ্ঞের ইংরেজি রচনা প্রকাশ করেছে। এবার এই বইয়ের বাংলা সংস্করণ প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছে দেশের প্রতিশ্রুতিশীল নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় প্রকাশনী বেহুলাবাংলা।