“নিঃসঙ্গ শেরপা : শামসুর রাহমান" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ তিরিশি পাঁচ মহৎ আধুনিক-উত্তর বাঙলা কবিতার প্রধান পুরুষ শামসুর রাহমান। তাঁর কবিতায় অত্যুজ্জ্বল পরিণতি লাভ করেছে। রবীন্দ্রোত্তর সে-কবিতাধারা, যার প্রিয় অভিধা আধুনিক কবিতা। শামসুর রাহমান বাহ্যজগত ও সমকাল ও অব্যবহিত প্রতিবেশকে শুষে নেন আপন অভ্যন্তরে, এবং তাঁর কবিতা ধ্যান বা স্তব বা গান বা শাশ্বত শ্লোকের বদলে হয়ে ওঠে সমকালীন জীবনসৃষ্টি। ওই কবিতা হঠাৎ আলাের ঝলক, শান্ত স্নিগ্ধতা, প্রশান্তির বদলে সঞ্চার করে বিশশতকের দ্বিতীয়াংশে বসবাসের তাপ-জ্বালা-দাহ। শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা সমকালীন বাঙলা ভাষার প্রধানতম কবির কবিতার গভীরব্যাপক ভাষ্য ও বিশ্লেষণ। আধুনিক বাঙলা ভাষার আর কোনাে কবিকে নিয়েই এমন ব্যাপক, অনুপুঙ্খ, অন্তদৃষ্টিউজ্জ্বল গ্রন্থ রচিত হয় নি। শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা শুধু শামসুর রাহমানের কবিতারই বিশ্লেষণ-ভাষ্য নয়, সমগ্র আধুনিক । চৈতন্যেরও ভাষ্য। প্রথম প্রকাশের পরই (১৯৮৩) আধুনিক বাঙলা সমালােচনার ইতিহাসে অনন্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে গৃহীত হয়। এ-গ্রন্থ প্রথম প্রকাশের এক যুগ পরে প্রকাশিত হলাে অনন্য এ-গন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ।
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।