বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জনতা। শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র সম্মুখ সমর পর্যন্ত জনতাই ছিল সংগ্রামের চালিকা শক্তি। প্রতিরোধের প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ধাপে একটু একটু করে জনতার চারিত্রিক রূপান্তর ঘটেছে। যুদ্ধের সূচনালগ্নে আত্মরক্ষার্থে পাকিস্তানি বহরের চলার পথে নিরস্ত্র, নিরীহ যে মানুষটি ব্যরিকেড তৈরি করার চেষ্টা করেছিল, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বিদ্রোহী বাঙালি সেনা এবং ইপিআর - পুলিশের বিদ্রোহী দলগুলির সাথে সম্মিলনের পর, যৎসামান্য সামরিক প্রশিক্ষণে সেই মানুষই দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় রূপান্তরিত হয়েছে। ততদিনে তার আত্মরক্ষায় আগ্রহ, চূড়ান্ত বিজয় অথবা আমরণ লড়াইয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। যারা যুদ্ধের আগে কোনোদিন অস্ত্র ছুঁয়ে দেখেনি, যাদের যোদ্ধা হবার কোনো বাসনা ছিল না, মুক্তিবাহিনীর ৮০ শতাংশ সদস্য এসেছে সেই সাধারণ মানুষের কাতার থেকে। অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, অপ্রতুল অস্ত্র, অভিজ্ঞতার ঘাটতি তাঁরা পুষিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহস আর মনোবলের প্রয়োগ ঘটিয়ে। আমি চেষ্টা করেছি, দুর্জয় এই জনতার অবিষ্মরণীয় কয়েকটি যুদ্ধের কথা লিখতে। মুক্তিযুদ্ধের নিয়ে লেখালেখির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সঠিক তথ্য উপাত্তের অভাব তার অন্যতম। “বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধযাত্রা ১৯৭১” লেখার সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম, তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে সানন্দে সহায়তা করেছেন। প্রবাস জীবনে আমি সরাসরি তাঁদের সান্নিধ্যে আসতে না পারলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি তাঁদের সাথে সংযুক্ত হতে পেরেছি। এই পর্যায়ে যাঁরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের মধ্যে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, লেঃ কর্নেল মোদাসসের হোসেন খান বীর প্রতীক, মেজর এটিএম হামিদুল হোসেইন বীর বিক্রম এবং লেঃ কর্নেল মাহমুদুর রহমান চৌধুরী অন্যতম। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপ প্রক্রিয়ায় সূত্রধরের ভূমিকা পালনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক, পিএসসির কাছে আমার ঋণ অন্তহীন। গতবছর বইটি লেখা শুরু করার পর করোনা মহামারির হামলায় দ্রুত আমার পরিপার্শ্ব বদলে যেতে শুরু করেছিল। প্রায় প্রতিদিনই পরিচিত মানুষদের অকাল মৃত্যু সংবাদ অথবা আক্রান্ত হবার খবরে আমার মনোসংযোগে চিড় ধরেছিল। আমি মাঝপথে লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এবছরও পাণ্ডুলিপি দিতে দেরি করে ফেললাম। ‘স্বরে অ’ র প্রধান নির্বাহী আবু বকর সিদ্দিক রাজু তারপরও বলেছেন ‘সানন্দে গৃহীত হইল’। এই উদ্যমী মানুষটিকে অসংখ্য ধন্যবাদ।