প্রিন্সিপলস অব কুরআন কুরআনুল কারিম পৃথিবীর সকল জ্ঞানের উৎস।এটি আমরা সবাই জানি এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।কিন্তু জ্ঞানের এই মূলউৎস থেকে আমরা কীভাবে জ্ঞান আহরণ করব তা আমাদের জানা নেই। কুরআনুল কারিম আমরা সবাই কম-বেশি তিলাওয়াত করি,কুরআনের অনুবাদ ও তাফসির পড়ি,কিন্তু কুরআনের সঙ্গে আমাদের বন্ধনটা কেমন যেন প্রাণহীনই থেকে যায়। ৩০ পারা কুরআন আমাদের কাছে অধরা রহস্য মনে হয়।কুরআনের নুকুশ তথা বাহ্যিক শব্দগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আমরা জানলেও কুরআনের মর্মার্থ আমরা বুঝতে সক্ষম হই না। কুরআনুল কারিম যে আসলে কতটা বৈচিত্র্যময় তাও আমরা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারি না। কিন্তু কেন? কারণ কুরআন অধ্যায়নের মূলনীতিগুলো আমাদের জানা নেই। তাদাব্বুরে কুরআন তথা কুরআন নিয়ে চিন্তা-ফিকির ও গবেষণা করার সঠিক পথ ও পন্থা এবং মূলনীতিগুলো আমাদের অজানা। কীভাবে কুরআন অধ্যায়ন করলে কুরআনুল কারিম আমরা সহজে বুঝতে পারবো তাও আমরা জানি না। "প্রিন্সিপলস অব কুরআব" আপনাকে কুরআন বুঝার ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করার সংশ্লিষ্ট যতগুলো মূলনীতি আছে সবগুলো সম্পর্কে এবং কুরআনের মর্মার্থ বুঝতে যা যা প্রয়োজন সবগুলো বিষয়ের সঙ্গে একটি সহজ-সরল সেতুবন্ধন তৈরি করে দিবে। তাই কুরআনের অনুবাদ, তাফসির ও তার মর্মার্থ বুঝতে চাইলে এবং কুরআন সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য জানতে চাইলে এই গ্রন্থটি আপনাকে অবশ্যই অধ্যায়ন করতে হবে। এবং এই গ্রন্থটি অধ্যায়ন করলে আপনি সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন কুরআন আসলে কতটা বৈচিত্র্যময়! কুরআনুল কারিম কতটা সহজ! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বইটির প্রিতিটি বিষয় কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। প্রতিটি বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের একাধিক রেফারেন্স রয়েছে।বইটি মিশরের আল আযহার ভার্সিটি,বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ-ভারত,মাদিনা ভার্সিটিসহ বিশ্বের প্রায় প্রতি নামকরা ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চতর কুরআন গবেষণা বিভাগে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেও সকল তাফসির বিভাগে বইটি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। . মানবজাতির কল্যাণ ও পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তাআলা যত কিতাব ও সহিফা নাযিল করেছেন এগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো আল-কুরআন। কুরআন অবতীর্ণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আসমানি কিতাবসমূহের অবতরণ সমাপ্ত করেছেন। এবং পূর্বের সমস্ত কিতাবগুলোকে রহিত করে দিয়েছেন। শুধু তাই-ই নয় কুরআন দ্বারা বড় বড় আসমানি তিনটি গ্রন্থ তথা তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলকে রহিত করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই কুরআনের পরে আর কোনো আসমানিগ্রন্থ নাযিল করা হবে না। কুরআন আল্লাহ আআলার ঐশীগ্রন্থ মহাবিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক ও মুজিজাপূর্ণ একটি কিতাব। কুরআন পূর্বের সমস্ত কিতাবের সারনির্যাস তথা পূর্বের কিতাবে উল্লেখিত সমস্ত বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। তাই কুরআন নাযিল হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্নভাবে ঐতিহাসিক তাফসিরবিদগণ কুরআনুল কারিম নিয়ে ধারণাতীত গবেষণা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আরববিশ্বের প্রসিদ্ধ শাইখ মান্না‘আ আল-কাত্তান রাহ. লিখিত ‘মাবাহিস ফি উলুমিল কুরআন’ গ্রন্থটি উলুমুল কুরআন তথা কুরআন অধ্যায়নের মূলনীতির বিশেষ একটি গ্রন্থের স্থান দখল করে নিয়েছে। গ্রন্থটিতে লেখক উলুম কুরআন তথা কুরআন অধ্যায়নের মূলনীতির সমস্ত বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গোছালো ও জোরালো বক্তব্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রতিটি বিষয় এত সংক্ষিপ্তও নয় যে পাঠক বিষয়বস্তু বোধগম্য করতে পারবে না এবং এত দীর্ঘও নয় যে পাঠক এতে বিরক্তি বোধ করবে। বরং মধ্যমপন্থা অনুযায়ী গ্রন্থটিতে কুরআন নিয়ে গবেষণা করার সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় আলোচনার স্থান পেয়েছে। . বইটির কিছু অনন্য দিক ১-লেখক গ্রন্থটিকে খুবই চমৎকারভাবে সূচনা করেছেন।প্রথমেই লেখক ইলমের পরিচয় ও ক্রমবিকাশের আলোচনা করেছেন। এরপর কুরআন নিয়ে খুবই তথ্যবহুল একটি ভূমিকা লিখেছেন। ২- কুরআনের সংজ্ঞা, হাদিসে কুদসির সংজ্ঞা, হাদিসে নববি তথা সাধারণ হাদিসের সংজ্ঞা, কুরআনের নামসমূহ ও গুণাবলি এবং এর সাথে সাথে কুরআন এবং হাদিসে কুদসির মাঝে পার্থক্য ও হাদিসে কুদসি এবং সাধারণ হাদিসের মাঝে পার্থক্য তথ্যবহুলভাবে বর্ণনা করেছেন। ৩- ওহির সূচনা, ওহি অবতীর্ণের সম্ভাব্যতা, জিবরিল আমিনের নবিগণের নিকটে ওহি নিয়ে আগমন করার প্রকৃতি, ওহির অর্থ ও মর্ম , এবং ওহি অবতীর্ণ হওয়া নিয়ে নাস্তিক-মুরদাদ ,দার্শনিক , বৈজ্ঞানিক ও সংশয়বাদীদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও এগুলোর সমুচিত জবাব পেশ করেছেন। ৪-গ্রন্থটিতে মাক্কি-মাদানি আয়াতের পরিচয় তথা কোন আয়াত মক্কায় এবং কোন আয়াত মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং মাক্কি-মাদানি চিনাজানা ও বোঝার মূলনীতি এবং মাক্কি ও মাদানি আয়াতের বৈশিষ্ট্যসহ কোন আয়াত আগে এবং কোন আয়াত পরে এবং বিষয়বস্তুর দিক থেকে কোন আয়াত কোথায় কখন কিভাবে নাযিল হয়েছে এগুলোকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ৫-শানে নুযুল ও এর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো তথা, শানে নুযুল বর্ণিত হওয়ার শব্দ, এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে অবতীর্ণ আয়াতের সংখ্যা, শানে নুুযুলের ব্যাপারে উল্লেখিত রেওয়াতের সংখ্যা, শানে নুুযুল কি তার প্রেক্ষাপটের সাথেই নির্দিষ্ট ? শানে নুুযুল একটি হওয়া সত্ত্বেও একাধিক বর্ণনা উল্লেখিত হওয়া এবং শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে শানে নুুযুল জানার প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গ্রন্থটিতে সুগভীর আলোচনা করা হয়েছে। ৬- কুরআন অবতরণ সংক্রান্ত বিষয় তথা সমস্ত কুরআন একত্রে নাযিল হওয়া ও ধারাবাহিকতার সাথে ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুপাতে নাযিল হওয়া ও এভাবে নাযিল হওয়ার হিকমত নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন।। ৭-কুরআন সংকলনের ইতিহাস অর্থাৎ নববি যুগে কুরআন এবং চার খলিফার যুগে কুরআন সংকলন ও বিন্যাস , সুরা এবং আয়াতসমূহের বিন্যাস, রসমে উসমানি , আয়াতের শুরু ও শেষ , হজরত আবু বকর রা.এর সময়ে সংকলিত মুসহাফ ও উসমান রা.এর যুগে সংকলিত মুসহাফের মাঝে পার্থক্য এসব নিয়ে মর্মস্পর্শী আলোচনা পেশ করেছেন। ৮- কুরআন সাত হরফে নাযিল হওয়া, এবং এর উদ্দেশ্য ও মর্ম নিয়ে উলামায়ে কিরামের মতানৈক্য ও এর গ্রহণযোগ্য মত এবং কুরআন সাত অক্ষরে অবতীর্ণ হওয়ার হিকমত ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। ৯-কারী এবং কিরআত সংক্রান্ত আলোচনা তথা কিরআতের প্রকার, বিধান এবং মূলনীতি, তাজবিদ, কুরআন তিলওয়াতের আদব এবং কুরআন শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার বিধান নিয়ে গ্রন্থটিতে সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। ১০-একজন মুফাস্সিরের তথা তাফসিরবিদের জন্য ইলমের যেসমস্ত শাখায় পারদর্শী হওয়া একান্ত জরুরি সেগুলো তথা নাহু,সরফ,অর্থাৎ কোন শব্দটি সর্বনাম, কোনটি ক্রিয়া, কোনটি নির্দিষ্ট শব্দ কোনটি অনির্দিষ্ট , কোনটি একবচন কোনটি বহুবচন, কোনটি সমার্থবোধক শব্দ কোনটি নয় এবং বালাগাত , ফাসাফাত , মুহকাম ও মুতাশাবিহ আয়াত চেনার উপায় , কুরআনের কোন শব্দটি আম তথা ব্যাপক কোন শব্দটি খাস তথা নির্দিষ্ট , কোন শব্দটি মুতলাক তথা শর্তহীন ও কোন শব্দটি মুকাইয়িদ তথা শর্তযুক্ত কোন আয়াতটি নাসিক ও কোন আয়াতটি মানসুখ এবং এগুলোর পরিচয়, প্রকার , সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্যকে সুস্পষ্টভাবে পাঠকদের সামনে চমৎকারভাবে সহজসরল করে তুলে ধরার জন্য লেখক গ্রন্থটিতে উপরিউক্ত সবগুলোর উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। ১১-লেখক সতন্ত্র অধ্যায় কায়েম করে ইজাযুল কুরআন ( কুরআনের মুজিযা) তথা কুরআন অক্ষমকারী হওয়ার বিষয়টি আলোচনা করেছেন। এতে লেখক কুরআনের শব্দগত অলৌকিক দিক এবং জ্ঞানগত অলৌকিক দিক ও বিধানগত অলৌকিক দিকসহ কুরআনের কতটুকু অংশ অলৌকিক এনিয়ে অত্যন্ত সারগর্ভ আলোচনা করেছেন। ১২-এরপর আমসালুল কুরআন তথা উপমার শৈল্পিকতায় কুরআনের অলৌকিক দিক, এর সংজ্ঞা, উপকারিতা, কুরআনে উল্লেখিত উপমার প্রকার এবং কুরআনের আয়াতকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করার বিধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। ১৩- উলুমুল কুরআন তথা কুরআন অধ্যায়নের মূলনীতির সাথে সম্পৃক্ত সমস্ত বিষয় তথা আকসামুল কুরআন(কুরআনের শপথসমূহ) জাদালুল কুরআন (কুরআনের তর্কশাস্ত্র) ও কাসাসুল কুরআন তথা কুরআনে উল্লেখিত ঘটনা ইত্যাদির পরিচয়, সংজ্ঞা, উপকারিতা ও উদাহরণ লেখক রা.অত্যন্ত পরিপটির সাথে বিষয়গুলো অভিনব ভঙ্গিতে পেশ করেছেন। ১৪- এরপর তরজমাতুল কুরআনের অধীনে কুরআনের আক্ষরিক অনুবাদ, কুরআনের শাব্দিক অনুবাব এবং ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ নিয়ে এবং এগুলোর বিধান নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে। ১৫-অতঃপর তাফসির, তাবিল এবং উভয়ের মাঝে পার্থক্য ও উভয়টির আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা উল্লেখ করে মুফাস্সির তথা কুরআনের গবেষক হওয়ার জন্য কি কি শর্ত ও আদবসমূহ , নববি যুগে ও সাহাবি তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়ি থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত লিখিত তাফসির ও মুফাস্সির এবং তাফসির বিল মাসুর (তথা কুরআনের তাফসীর কুরআন বা হাদিস দিয়ে করা) ও তাফসির বিল রায় (তথা আকল দিয়ে তাফসীর করা) ও তাফসিরের অন্যান্য প্রকার নিয়ে গ্রন্থটিতে যুৎসই আলোচনা করা হয়েছে। ১৬-এরপর তাফসির বিল মাসুর ও তাফসির বিল রায় নিয়ে লিখিত গ্রন্থাবলি ও লেখকদের পরিচয় এবং যারা বর্তমান সময়ে বিষয়ভিত্তিক তাফসির গ্রন্থ রচনা করেছেন তাদের পরিচয় ও তাদের লিখিত তাফসিরের যথাযথ মূল্যায়ন অত্যন্ত যত্নের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। . মোটকথা, বলা যায় লেখক রাহ.উলুমুল কুরআন তথা কুরআন অধ্যায়নের মূলনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এমন কোনো ইলম গ্রন্থটিতে উল্লেখ করতে কার্পণ্য করেননি। বরং উলুমুল কুরআন সম্পৃক্ত সকল আলোচনা তিনি যথাযথভাবে সুস্পষ্ট করে তাত্ত্বিক আলোচনা উল্লেখ করেছেন। পরিশেষে শুধু এতোটুকুই বলবো- উপরের আলোচনার মাধ্যমে একটি সমুদ্রের বর্ণনা দিয়েছি মাত্র। যারা উলমুল কুরআনের গভীর সমুদ্রে অবগাহন করতে চায় তাদের জন্য শাইখ মান্না‘আ আল-কাত্তান রাহ.রচিত গ্রন্থটি আদ্যোপান্ত অধ্যয়ন করা অবশ্য কর্তব্য!