বাঙালি যতই জাতপাত এবং সম্প্রদায়ে বিভক্ত থাকুক না কেন, তারা সামগ্রিকভাবে বোধহয় কেউই বাংলা ভাগটা আন্তরিকভাবে মেনে নেয়নি। সম্প্রদায় বিশেষের কিছু মানুষ হয়ত এই ভাগের কারণে সাময়িক কিছুটা লাভবান হয়ে, সামূহিক লোকসানের ব্যাপারে বিভ্রান্ত ছিল, কিন্তু বিষয়টার অন্তর্গত কুফল। অর্থাৎ বাঙালি বিভাগের সত্যটা অচিরেই তাদেরও বিমর্ষ করেছিল। দুই বাংলার লেখক শিল্পীদের তদবধি সাধনা কীভাবে এই বাঙালি ভাগের অভিশাপ থেকে নিজেদের উদ্ধার করা যায়। সেই সাধনার ফলস্বরূপ আমরা যে ব্যাপক সাহিত্য সম্ভার পেয়েছি-এমন নয়। তথাপি যতটুকু পেয়েছি বা এখনও পেয়ে চলেছি তা-ও যে একেবারে তুচ্ছ সেকথা বলতে পারব না। উভয় পারের অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্পকারের আকুল-আর্তনাদযুক্ত বেশ কিছু রচনা আমাদের সাহিত্যে আছে। সংস্কৃতিগতভাবে একাত্ম বজায় রাখার জন্য সেটাই যে উত্তম তপস্যা সে সত্য উভয় পারের সংস্কৃতি প্রেমী তথা বাঙালি অস্মিতাকামীরা সবাই মানেন। সেই তপস্যার ধারা ধরে, প্রাক্তন তপস্যা-ফলগুলোর সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন তরুণ সংস্কৃতিকর্মী সজল আহমেদ। তাঁদের মত যোগ্য উত্তরসূরীরা নিঃসন্দেহে এই দুঃসাহসের অধিকারী। তাঁর লেখক চয়নে প্রবীণসুলভ মননশীলতা স্পষ্ট। যেসব গল্পকারদের গল্প তিনি সংকলিত করেছেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই সাহিত্য পরম্পরায় প্রতিনিধি স্থানীয়, তথা শুধু সাহিত্যিকই নন, বরং বলা যায় বাংলা পথিক। ভৌগোলিকভাবে দুই বাংলা আবার কোনও দিন যুক্ত হবে কি না বা হওয়া সঙ্গত কিনা জানি না, তবে সজল আহমেদের মত নবীন এবং উৎসাহী সম্পাদকেরা এই সংস্কৃতি সমন্বয়ের ঐতিহ্য ও পরম্পরা বজায় রেখে চললে বাঙালি ও বাংলা ঋদ্ধ হবে সন্দেহ নেই। এই সঙ্গে আকাক্সক্ষা করব সম্পাদক যেন বর্তমান প্রজন্মের লেখকদেরও অনুরূপ প্রয়াসের সম্ভার নিয়ে একটি পৃথক সংকলনও প্রকাশে ব্রতী হন। কেননা, তাহলেই একমাত্র দলিলায়িত থাকবে বাঙালির সংস্কৃতি সাধনার নিত্যবহতা, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হবে প্রয়োজনীয় সতর্কীকরণ। --মিহির সেনগুপ্ত