সম্পাদকীয় ব্রিটিশ ভারতের অন্ধকার আকাশে ধুমকেতুর ন্যায় জন্ম নেয় এক বিস্ময় বালক। তীব্র আলোড়ন তুলে সমগ্র বাংলাকে জাগিয়ে তোলেন তিনি। নাম তার সোমেন চন্দ। ১৯২০ সালের ২৪ মে ঢাকার টঙ্গি থানার অন্তর্গত আশুলিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে তার জন্ম। সোমেন একাধারে কমিউনিস্ট বিপ্লবী সাম্রজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ- বিরোধী সাহিত্যিক, সংগঠক। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই সোমেন মার্কসবাদী রাজনীতিসাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের অনুরাগি হয়ে ওঠেন এবং নিজেও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাসী। বুকে সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন লালন করা এই যুবককে ফ্যাসিবাদী গুণ্ডারা ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। জন্ম শতবর্ষ পেরিয়ে ও মৃত্যুর আট দশক পরেও সোমেন চন্দ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন এবং তাঁর সাহিত্য ফল্গুধারার ন্যায় প্রবহমান। এখনো তার সাহিত্যের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অথচ এ যুবক বেঁচে ছিলেন মাত্র ২২ বছর। এই ২২ বছরে তিনি রচনা করেছেন ২৯টি ছোট গল্প, একটি উপন্যাস, দুটি একাঙ্কিকা ও তিনটি গদ্য কবিতা। যে বয়সে কোনো লেখকের লেখার হাতে খড়ি হয়, সেই বয়সেই তিনি লিখে ফেলেছেন এতগুলো লেখা। যার মধ্যে পরিণত এক শিল্পীর সকল গুণাবলির ছাপ রয়েছে। বিশেষকরে তার ছোটগল্পসমূহে তিনি বিস্ময়কর এক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
কামাল লােহানী একজন প্রবীণ সাংবাদিক এবং এদেশের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পুরােধা ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। মুক্ত স্বদেশে বাংলাদেশ বেতার সংগঠনের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁরই কাঁধে। কিন্তু টিকতে পারেননি বেশিদিন। একবছর পরে ফিরতে হয়েছিল তাঁর পূর্বের পেশা সাংবাদিকতায়। সহ-সম্পাদক থেকে সম্পাদক হয়েছিলেন সুদীর্ঘকালের এ পেশায়। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, সাংবাদিক অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও স্বাধীনতাত্তোর কালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কামাল লােহানী সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, ফ্যাসিবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরােধী সংগ্রামে রাজপথের সৈনিক ছিলেন এবং এখনও আছেন। স্ত্রী দীপ্তি লােহানী (প্রয়াত) ছিলেন গেরিলা যােদ্ধাদের সহযােগী ।