"মা, তুমি নিশ্চয় সকালের ঘটনার জন্য অহনও রাইগ্যা আচো? তাই তুমি আমারে দূরদেশে পাঠায় নিক্ষো! আমি আর দুষ্টুমি করুম না মা। তুমার সগল কথা শুনব। আমারে অতোদূরে পাঠায় দিও না মা।" "নারে, ইসবের আমি কিচ্ছুটি জানিনে। তুর বাবা নিশ্চয় তুর ভালোর জন্যিই পাঠাচ্ছেন। দেখচিস তো বাপ, ইদিকে কী ঝামেলা আর গন্ডগোল চলতিচে। তুই ওখেনে গিয়া ভালো কইরে লেখাপড়া করবি...." সিতাংশু সেদিন মায়ের কাছে নালিশ জানাতে এসে বেকুব হয়ে গিয়েছিল। মায়ের সব কথা সে কি বুঝেছিল? হয়তো নয়, তবে তার মনের মধ্যে সারাজীবনের জন্য গেঁথে গিয়েছিল; তাকে অনেক বড় হতে হবে। সবার জন্য ভাবতে হবে। এই কাহিনীর শুরু পঞ্চাশের দশকের এক উত্তাল সময়ের। পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেলেও দেশভাগ জনিত হিংসার কারনে বলি হয়ে চলেছে অসংখ্য নরনারী। স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়ে ছাড়তে হয়েছিল নিজের ভিটেমাটি ও কাছের মানুষদের। নতুন জায়গায় এসে সবকিছু ভুলে যদিওবা তারা আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, কিন্তু তারপরেও নানাভাবে অত্যাচারিত ও অবমাননার শিকার হয় তারা। তরুণ সিতাংশু এইসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে চায়। দেখে শাসকের গদিতে বসে থাকা এক শ্রেণীর মানুষের নির্লজ্জ রূপ। তার মনে প্রশ্ন দেখা দেয়, তাহলে স্বাধীনতায় মানুষ কী পেল? সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা সেই তো থেকেই গেল। "রাজা আসে যায়। বদলায় না কিছুই।" সিতাংশু দমে না। ছোটবেলা থেকেই সে নির্ভীক। অন্যায় দেখলে কখনও চুপ থাকতে পারে না। অবলীলায় সে ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যের বিপদে। সে সকলকে সংঘবদ্ধ করে তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে তোলে। পাশাপাশি চাষাবাদে উৎসাহ দিয়ে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। গ্রামের নিরক্ষর মানুষদের অক্ষর পরিচয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার লড়াই। এ লড়াইয়ে তার পাশে থাকে স্ত্রী সুধা ও ভাই অমৃতাংশু। অবশেষে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় কী?