‘বনলতা সেন’ জীবনানন্দ দাশের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। তাঁর জীবদ্দশাতেই যে কাব্যগ্রন্থের দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৪২ সালে বারোটি কবিতা নিয়ে ‘এক পয়সায় একটি’ শিরোনামে প্রথম, এবং সর্বশেষ ১৯৫৪ সালে, সিগনেট প্রেসের উদ্যোগে, আরও কবিতা নিয়ে। যে সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। আধুনিক বাংলা কবিতা যেন বনলতা সেনের হাত ধরে রবীন্দ্র-উত্তর যুগে পরিণতিতে পৌঁছে। জীবনানন্দের কবিতার অমোঘ অনিবার্যতা, তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন এক পরিসরের-সময়ের মুখপাত্র হিসেবে। তাঁর কবিতা চিন্তাশীল এক আধুনিক মানুষের মৌলিক ভাবনার ধারক, যেটি আকৃতি দিয়েছিল নতুন এক সংবেদনশীলতাকে, জন্ম দিয়েছিল নবীন বাস্তব চেতনার। প্রকৃতির বৃক্ষ, তরুলতা, স্রোতস্বিনীর দৃশ্য ও শব্দের ভুবনই জীবনানন্দের কবিতার ভিত্তিভূমি। স্বতন্ত্র সত্তা, স্বকীয় এক মেজাজ। বাংলা ভাষায় সবচেয়ে পরিচিত প্রেমের কবিতা ‘বনলতা সেন’। এতটাই যে কবিতাটির নাম কবির নামের সমার্থক হয়ে গেছে রীতিমতো। নাম কবিতার ন্যায় এ কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাই প্রবলভাবে আবহ-নির্ভর। জীবনানন্দ দাশের চিত্ররূপময় কাব্যের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন বনলতা সেন। অনেকাংশে জটিল, প্রকৃতির মতো রহস্যময়ী। ব্যঞ্জনায়, প্রতীকে অনন্য।
জন্ম-(ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। তাকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি (অক্টোবর ২২, ১৯৫৪ -বঙ্গাব্দ কার্তিক ৫, ১৩৬১ ) সালে মৃত্যু বরণ করেন।