বইটি পাঠ করার সময়কাল মাত্র দশ দিন। এই অল্প সময়ের মাঝেই পাঠক জানতে পারবেন—মহাবিশ্বের প্রকৃত সম্পদ নামে একজন ব্যক্তি যা যা সংগ্রহ করে, তথাগাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি—এর কোনোটিই সত্যিকার অর্থে সম্পদ নয়। বরং আসল সম্পদ হলো অন্তরের সুখ। এই সুখ কেবল অর্থ, বৈষয়িক সম্পদ এবং ব্যাংক-ব্যালেন্সের মাধ্যমে অর্জিত হয় না, বরং তা অর্জিত হয় অন্তরের প্রশান্তি এবং ইহকালীন ও পরকালীন আনন্দ-তৃপ্তি লাভের মাধ্যমে। অর্থতথা পয়সাকড়ি একজন ব্যক্তির প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটানোর উপকরণ মাত্র। যা সে অল্প পরিশ্রমে, দিনের কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করে কিংবা সারাজীবন খেটে সংগ্রহ করতে পারে। যদিও এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এই যে বিপুল ধন- সম্পদ ও প্রচুর ব্যাংক-ব্যালেন্স সে সঞ্চয় করল, এর বাস্তবতা হলো—সে নিজেই হয়তো একদিন এসব ছেড়ে চলে যাবে নতুবা এগুলোই তাকে ছেড়ে দেবে। দারিদ্র্যতা যেমন নিজেই অসুখের কারণ হয় না, তেমনি ধন-সম্পদও সুখের মূলনয়। দারিদ্র্যতা অথবা ধনাঢ্যতা আমাদের সুখী কিংবা অসুখী বানায় না। বরং আমরা এর বিপরীত দৃশ্যই প্রত্যক্ষ করি বরাবর। তবে দুটো থেকে অর্জিত ফলাফল মানুষকে সুখী কিংবা অসুখী বানাতে পারে। যেমন, দারিদ্র্যতা মানুষের প্রতিভাকে উদ্ভাসিত করে আর বিলাসিতা তাকে করে দেয় শ্বাসরুদ্ধ। দরিদ্র হওয়া কোনো পাপ নয়। পাপ হলো—ধনী হওয়ার পর অন্যদের মানুষ মনে না করাকিংবা তাদেরকে নিজের প্রবৃত্তি ও কামনা অনুযায়ী চালিত দেখতে চাওয়া। কোনো সমাজে তীব্র দারিদ্র্যতা ও বিকট ধনাঢ্যতা একত্রিত হলে, আজ হোক বাকাল সেখানে বিস্ফোরণ ঘটবেই। একটি সমাজে বিদ্যমান সম্পদ দিয়ে কখনোই তার সমৃদ্ধির পরিমাপ করা হয় না। বরং করা হয় চিন্তা-চেতনাকে মূল্যায়ন করে। অতিরিক্ত প্রাচুর্যতা যেমন মানুষকে অসুখী করে তোলে, তেমনি তীব্র দারিদ্র্যতাও মানুষের অসুখের কারণ হতে পারে। যেসব ধনীরা মনে করে—গরিবরাই প্রকৃত সুখী, তারা কি ওইসব গরিবদের চেয়েও বোকা, যারা মনে করে ধনীরাই প্রকৃত সুখী? বিপরীতে, যেসব গরিবরামনে করে—ধনীরাই বুঝি সুখী, তারা কি ওইসব ধনীদের চেয়েও বুদ্ধিমান, যারামনে করে গরিবরাই সত্যিকার অর্থে সুখী? ধনাঢ্য কিংবা দারিদ্র্যতা একটি পরীক্ষা। দুনিয়াতে মানুষনিজ নিজ ভাগ্য অনুপাতে পরীক্ষায় পতিত হবে। দুনিয়াতে এসব বণ্টিত হয় বিপদাকারে। যেমন: একজন ফকির তো আরেকজন ধনী; একজন শক্তিশালী তো অপরজন দুর্বল; একজন বিচক্ষণ তো আরেকজন বোকা; একজন দেখতে সুন্দর তো আরেকজন কুৎসিত। দুনিয়াতে এসব বিপদরূপে বিতরণ করা হয়। ধন-সম্পদ যেমন ধনীদের জন্য পরীক্ষা। তেমনি গরিবের পরীক্ষা হলো দারিদ্র্যতা। প্রতিটি মানুষই নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা তদবির-চালিয়ে যায়। যদি কাঙ্ক্ষিত সম্পদ অর্জন করতে নাপারে, তা হলে তার জন্য পরীক্ষা হলো দারিদ্র্যতা। এই পরিস্থিতিতে সে যদি ধৈর্য ধরে, সংযমী হয় এবং সৎ পথে থাকে—তা হলে সে সফলকাম। তেমনিভাবে ধনীর পরীক্ষা হলো সম্পদ। যদি সে তা অন্যদের জন্য ব্যয় করে, বিনয়ী হয় এবং সাহায্য সহযোগিতা করে—তা হলে সে পরীক্ষায় সফল। সুতরাং কে ধনী আর কেগরিব তা নির্ধারণ করা হয় আল্লাহর সামনে পেশ করার পর। ———