বইটি কাদের জন্য? এই বইটা দুই শ্রেণির পাঠককে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। মূলত শিশু ও কিশোরদের উদ্দেশ্য করে বইটা লেখা হলেও যেকোনো বয়সের যেকোনো মানুষ বইটা পড়ে প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে পারবে ও হাতেকলমে শেখার মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এই বইটাতে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি প্রোগ্রামিংয়ের মূল আইডিয়াগুলো বোঝানোর। এখন অনেকের কাছেই হয়তো কম্পিউটার বা মোবাইল নেই, সেটা মাথায় রেখেই আমি বইটা সাজিয়েছি। তাই যদি কেউ শুধু বইটা পড়েও, তাহলেও তার প্রোগ্রামিংয়ের ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি বলবো শুধু স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নয় যেকোনো বয়সের মানুষই এই বইটা পড়তে পারেন, কারণ প্রোগ্রামিং মানুষের চিন্তাশক্তিকে ধারালো করে।
কীভাবে পড়ব বইটা? তোমরা যারা বইটা পড়বে তাদের অনেকেই হয়তো প্রথমবার প্রোগ্রামিংয়ের সাথে পরিচিত হচ্ছ। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে বইটা পড়ব কীভাবে! গল্পের বইয়ের মতো কি এক বসায় পড়ে ফেলব! না। তা করা যাবে না। তাহলে কোনো লাভই হবে না। তুমি প্রতিদিন একটা টপিক পড়তে পারো। সে টপিক পড়া শেষ হলে, ওই টপিক নিয়ে ইন্টারনেটে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারো। ইউটিউবে কয়েকটা ভিডিও দেখতে পারো। লেখাগুলো বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে লেখা। তাই আস্তে আস্তে পড়তে হবে। প্রতিটা লাইন এক দমে না পড়ে, নিশ্বাস ফেলে ফেলে পড়তে হবে। সর্বোপরি ধৈর্য রাখতে হবে অবশ্যই। আর শুধু পড়লে হবে না, আমি যে কোডগুলো লিখেছি সেগুলো লিখে চালিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি নিজেও নতুন নতুন কোড লেখার চেষ্টা করতে হবে। শেখার কোনো শেষ নেই। শেখা চালিয়ে যেতে হবে। আরেকটা কথা, প্রোগ্রামিং শিখতে গিয়ে নিজের পড়ালেখার ক্ষতি করা যাবে না। প্রোগ্রামিংকে আমরা শিখব খেলার ছলে। কৌতূহলে। নতুন এক জগতকে জানার উদ্দেশ্যে। তবে নিজের প্রতিদিনকার পড়ালেখার ক্ষতি করে যদি নতুন জগতকে জানতে বের হও তাহলে বেশি দূর এগোতে পারবে না। হোঁচট খেতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিকে ‘আইসিটি’ বিষয়ে প্রোগ্রামিংয়ের সাথে পরিচয় হলেও প্রেমটা জমে ওঠে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করার সময়। তখন উপলব্ধি করলাম এত মজার ও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের সাথে যদি স্কুল জীবনেই পরিচিত হতাম কত ভালো হতো। একদিন অদম্য প্রকাশের প্রকাশক নাজিব রাফে ভাইয়ের সাথে আলোচনায়, তিনি বললেন যে কিশোর কিশোরীদের জন্য একটা বই লিখতে। আমি বললাম, ভাই আমি তো কিশোর ঔপন্যাসিক না। তিনি আমাকে বললেন প্রোগ্রামিংয়ের বই লিখতে, বাচ্চাদের জন্য। প্রস্তাবটা আমার কাছে ভালো লাগল। আমি তখনই রাজি হয়ে গেলাম। এরপর যখন ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম, দেখলাম বাচ্চাদের জন্য প্রোগ্রামিং এর অনেক অনেক রিসোর্স। তার মানে আধুনিক বিশ্বে এই চর্চা আরও অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ভাবা শুরু করলাম, কীভাবে লেখা যায়। কিশোর কিশোরীদের কথা মাথায় রেখে লিখতে গিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। প্রথম বই ‘পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ – ৩’ লেখার পর একটা অভিযোগ শুনেছিলাম যে বইটা অতি সহজ করে লিখিনি। অভিযোগটা আংশিক সত্য। সে বইয়ে আমার উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রামিং যারা কিছুটা জানে, তাদের জন্য বইটা। তবে চেষ্টা করেছি এই বইতে সহজ থেকে সহজতর করে বোঝাতে। প্রোগ্রামিং শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কনসেপ্টগুলো বাস্তব জীবনের ঘটনার মাধ্যমে জীবনঘনিষ্ঠ, মজাদার ও সহজবোধ্য করে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। ভার্সিটিতে পড়াতে গিয়েও এই উদাহরণগুলোই আমি ব্যবহার করেছি। দেখেছি ছাত্রছাত্রীরা বোঝে কিনা। তাদের কাছে সহজবোধ্য হয় কিনা। সেই উদাহরণগুলোকেই আরও সুন্দর করে, ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি এখানে। আশা করি সবার জন্য সেসব উদাহরণ উপকারী হবে। প্রোগ্রামিংয়ের পথচলা অনেক দীর্ঘ। সে দীর্ঘ পথে হাঁটা শুরু করতে যাচ্ছো তোমরা। তোমাদের এ পথচলা আনন্দময় হোক। শুভকামনা রইলো। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই, তারেক ওবায়দা, এনায়েতুর রহীম, জুনায়েদ আহমেদ, মুস্তাকিমুর রহমান, মেহেদী হাসান পিয়াশ ভাইদের। যারা তাদের ব্যস্ত সময়ের মাঝেও বইটির রিভিউ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, ভুলত্রুটি সংশোধনে সহায়তা করেছেন। এই বইয়ের ব্যাপারে যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাকে ই-মেইল করতে পারো [email protected] তে।