নানা আয়োজনে আর আলাপনে স্মরণাতীত কাল থেকে একটি কথা প্রচলিত: 'বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ'। কালের আবর্তে এই কৃষিভিত্তিক দেশ হারিয়েছে তার জৌলুশ, তার সম্ভাবনা হয়েছে নানাভাবে বিনষ্ট৷ তাই, এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি কী? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আবশ্যক৷ বাংলার কৃষিভিত্তিক সমৃদ্ধির তত্ত্বতালাশ করতে গেলে সবাই একবাক্যে বলেন, 'উর্বর ভূমিরূপ আর প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সস্তা শ্রম যা বাংলার কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকে গতিময়তা এনে দিয়েছিল। এর ফলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে একটি সময় আত্মপ্রকাশ করেছিল এই কৃষি এবং কৃষিনির্ভর বাণিজ্য'। তবে ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে বছর বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন ঘটেছিল পরিস্থিতির৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভূমির অপব্যবহার দিনে দিনে কমিয়ে দিয়েছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ। এর ফলে ব্যাহত হয়েছে কৃষিজ উৎপাদন। তবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বিশ্বের নানা দেশের কৃষকে যেমন গতিশীল করেছে তেমনি এর মাধ্যমে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হতে পারে বাংলাদেশও৷ এদেশের অপর্যাপ্ত চাষযোগ্য ভূমিরূপে সঠিক ব্যবহারের জন্য সবার আগে প্রয়োজন টেকসই প্রযুক্তির৷ বিশ্বের নানা দেশে কৃষিক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যেভাবে নিত্যনতুন উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদেরও৷ এ গ্রন্থে এমনি নানা কৃষিপ্রযুক্তি ও তার টেকসই ব্যবহারের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে৷ কৃষি বিষয়ক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ, কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আগ্রহী পাঠকের উপকারে আসবে এ গ্রন্থ৷
অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম জন্ম ১৯৭৬ সালের ১৫ জুলাই চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বাবা মরহুম মনিমুল হক এবং মা মোসাঃ সামসুন্নাহার বেগম । ড. শামীম, ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। স্ত্রী মোসাঃ সারমিন ফেরদৌস এবং একমাত্র সন্তান মোঃ সাদাত শাহরিয়ার । মনাকষা হুমায়ুন রেজা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী থেকে ১৯৯৩ সালে এইচএসসি পর্যায়ে উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন । এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে । ড. শামীম, ১৯৯৭ সালে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানে এবং ১৯৯৮ সালে ঐ একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়েও উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবন শেষ করে ড. শামীম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ-এর অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন দেশি ও বিদেশী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। শিক্ষা কমিশন-২০০৩'-এ গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন । সর্বশেষ, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)-এর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন অনুষদে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন । বর্তমানে তিনি বাউবি'তে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন । ড. শামীম, জাপান সরকারের মনবুশো বৃত্তির অধীনে ওকাইয়ামা বিশ্ববিদ্যালয় (Okayama University), জাপান থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Science ) - এ ২০১০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন । আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ও পুস্তকে তাঁর ৩০টির অধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভেষজ উদ্ভিদ (Medicinal Plants) ও মাটির স্ট্রেপটোমাইসিস (Soil Streptomyces spp.) প্রজাতি থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক এবং কীটনাশকের অনুসন্ধান নিয়ে গবেষণা করছেন । ড. শামীমের রচিত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ‘কৃষিশিক্ষা’ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র বই দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে পড়ানো হচ্ছে । ড. শামীম, বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতোমধ্যে, তিনি নিজ গ্রামে একটি লাইব্রেরি স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন ।