নদী এবং নারী। নারীকে নদীর সাথেও তুলনা করা হয়। মানবের যাপিত জীবনের পরতে পরতে মানবীর যে প্রেমময় আখ্যান রয়েছে তা সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই তার উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে আছে। সেই প্রেম কখনো কখনো বয়সসীমা ছাড়িয়ে অসমপ্রেমেও রূপ নেয়। মনের গহীন গহনে লুক্কায়িত থাকে প্রেমের আগ্নেয়গিরী। কখনো তা বিস্ফোরিত হয়, আবার কখনো বা ঘুমন্ত-- নিরবে দগ্ধ হয়। ‘চন্দনা যখন নদী হয়ে যায়’ ঠিক তেমনি একটি অসম প্রেমের জটিল উপাখ্যান। যা প্রকাশ করা যাচ্ছে না-- অথচ হৃদয় কুরে কুরে খাচ্ছে অন্তঃজ¦ালায়, যৌবনের প্রারম্ভেই বিধবা হয়ে যাওয়া এক নারীর মর্মবেদনা। এখানে ঘুণে ধরা সমাজের অবক্ষয়, অসুস্থ রাজনীতি, নীতি-নৈতিকতা-- পরিবারের অবজ্ঞা-অবহেলা, লোলুপ লালসা, আবার আদর্শিক মূল্যবোধসম্পন্ন এক তরুণীর প্রবল দৃঢ়তা-- সবই উঠে এসেছে উপন্যাসের সবুজ জমিনে। একজন মমতাময়ী নারীর স্নেহবাৎসল্য, নস্টালজিয়াও অবলীলায় উঠে এসেছে নদীর মতো আঁকাবাঁকা হয়ে। নদী যেমন মরে মরে বেঁচে থাকে, তেমনি উপন্যাসের শেষে এসে চন্দনা নামের নদীটা যেন নতুন জীবন পায়, যে জীবনের জন্য বহুদিন বুক পেতে ছিল সে। দুকূল ভাসানো যৌবনা নদী হয়ে যায় চন্দনা, জেগে ওঠে সবুজ স্বপ্নের উর্বরতার পলিমাটি-- নতুন জীবনের গান। কথাসাহিত্যিক রকিবুল হাসান-এর এমনই এক অনবদ্য মনস্তাত্ত্বিক শিল্পসৃষ্টি ‘চন্দনা যখন নদী হয়ে যায়’।
রকিবুল হাসান। জন্ম ৩১ মে, ১৯৬৮। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে। মাতা: পরীজান নেছা। পিতা: মোহা. উকিল উদ্দিন শেখ। লেখাপড়া: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি.এ. (অনার্স) এম.এ., পিএইচডি.। পেশা: সাংবাদিকতা। সম্পাদক, সাপ্তাহিক অর্থবিত্ত ও গৈরিক (সাহিত্যপত্রিকা)। প্রকাশিত গ্রন্থ : প্রবন্ধ: বিপ্লবী ভাঘা যতীন, পথের কথা, কয়ায় রবীন্দ্রনাথ, বাঘা যতীন এবং প্রাজ্ঞজন, কাব্য: দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত, অনিয়ম চুম্বনের সিঁড়ি ধরে, এক ধরনের অহংকার। উপন্যাস: নবীরন, ভাঙন, জীবন দিয়ে ভালোবাসি, এ কি তৃষ্ণা এ কি দাহ, ছায়াবন্দি, সম্পাদনা: নবতরঙ্গের ধ্বনিবন্ধ, আমার সোনার বাংলা কই, কত কবিতা শুনলাম কিন্তু। সাক্ষাৎকারভিত্তিক গ্রন্থ: ইন্টারভিউ। পুরস্কার: বাংলা সাহিত্য পদক (১৪১৩ বাংলা), স্যার সলিমুল্লাহ পদক (২০০৬), দি সান সম্মাননা (২০১০), চাইল্ড হেভেন সম্মাননা (২০১০)। জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমী, আজীবন সদস্য, কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ঢাকা; নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাহিত্য একাডেমি, কুষ্টিয়া।