‘দূরের পাখির গান’ কবি মুরশিদা বানুর প্রথম কবিতাগ্রন্থ। কবি ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি করে আসছেন। বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করেও দেশ-জাতি, পরিবার, পরিবেশ আর দেশাত্ববোধের এক মায়াময় আবীরে জড়িয়ে আছেন। প্রবাসী জীবন তাঁকে কাঁদায়। যার কিছুটা হলেও আমরা তাঁর কবিতায় উপলব্ধি করতে পারি। দূরের পাখি হয়ে লাল সুতার নক্শীকাঁথাটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হয় না। ভোরবেলায় লাল মোরগটা এখনও কি ডাকে! কতদিন ভোরবেলায় কাকের ডাক শুনি না। শিউলি ঝরা উঠোনে কতদিন বসি না, কুটুমপাখির ডাক শুনি না; চৈতালী দুপুরে মধ্যপুকুরে ডুব-সাঁতার কাটি না-- ঘরের কোণের লেবু ফুলের গন্ধ পাই না। কতদিন সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলি না মৌমাছির গুনগুন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে পুকুরঘাটে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বসা, কতদিন বাড়ির আচার, তালশাঁস খাই না। বৈশাখের ঝড়ের রাত শেষে ঝরা আমও কুড়ানো হয় না আমাদের কতদিন সন্ধ্যাবেলায় মটরশুটি তোলা-- নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধ পাই না-- পিঠাও খাই না। কতদিন বেলীফুলের মালা গাঁথি না, বাদল দিনের কদমফুল পাড়ি না। অলস প্রহরে কতদিন কোকিলের গান শুনি না কতদিন শ্রাবণ মেঘের বৃষ্টিতে ভেজা, জ্যৈষ্ঠের দুপুরে কলাপাতায় কাঁচা আম খাওয়া, শীতের সকালে খেজুর রস, কুসুর গুড়ের মোয়া মুড়কি খাই না ঝিনুকের বুকের মুক্তা খুঁজি না লীলবিলের শাপলা তুলি না! কাঠবিড়ালের পেয়ারা খেতে দেখি না পুকুরধারে তালের শাখায় ঝিরিঝিরি বাতাসে বাবুইকে দুলতে দেখি না। কারণ এখন আমরা দুজন, দুজন হতে দূরে-- দূরে-- বহুদূরে এইযে দূরে বহুদূরে কবির প্রবাসী জীবন তারই নস্টালজিয়া তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কবি তার যাপিত জীবনের নানান অনুষঙ্গে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও দেশ-মাটি-নাড়ির টানে তাঁকে বারবার কবিতায় ফিরে আসতে হয়। ফিরে আসতে হয় ফেলে আসা দিনের মেঠোপথে... কবির প্রথম কবিতাগ্রন্থ আমাকে মুগ্ধ করেছে, বিমোহিত করেছে। যে কেউ তাঁর কবিতা পাঠে তৃপ্ত হবেন, হতাশ হবেন না-- একথা নিশ্চিতভাবে বলে দেয়া যায়।