সাহিত্যের একটি ধারা হিসেবে জীবনীগ্রন্থ যতোখানি সমৃদ্ধ কিংবা জনপ্রিয়, আত্মজীবনী কিন্তু ততোখানি নয়। এ কথাটি বাংলাসাহিত্য সম্পর্কে সম্ভবত আরো বেশি প্রকটভাবে প্রযোজ্য। একথা ঠিক যে সৃজনশীল যে-কোনো লেখকের জীবনের নানান অভিজ্ঞতা তার লেখার পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, কিন্তু সে তো প্রথম পুরুষে সরাসরি কোনো বর্ণনা নয়; নানান অবস্থার উপস্থাপনে সেগুলোর অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিত থাকতে পারে কিংবা কোথাও কোথাও থাকে। অথচ একজন লেখকের কিংবা যে কোনো একজন কর্মবীরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পাঠকের কাছে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই শিক্ষণীয় হতে পারে। এ কে এম শামসুদ্দীন, প্রচলিত অর্থে সুপিরিচিত কোনো লেখক হয়তো নন, কিন্তু এই বইখানিতে প্রাক্তন একজন সিভিল সার্ভেন্ট তাঁর জীবনের একেবারে শৈশব থেকে সত্তরোর্ধ বর্তমান সময় পর্যন্ত ধাপে ধাপে উঠে আসার যে অকপট বর্ণনা দিয়েছেন অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ভাষায় তা’ পাঠকের কাছে শুধু উপভোগ্যই নয়, অসাধারণ শিক্ষণীয় হবে বলে মনে হয়। প্রাইমারি স্কুল থেকে মাদ্রাসায়, সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। সর্বশেষ বিসিএস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে জেলা প্রশাসক হওয়ার পর তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সম্পাদন করেছেন তিনি। তা’ অবশ্য আগেও কেউ কেউ করেছেন এবং পরেও নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু আরো অনেক কর্মকর্তা যা’ করেন না, কিংবা করতে পারেন না, তা’হলো বিভিন্ন কর্মস্থলে অনন্যসাধারণ বেশ ক’টি মানবহিতৈষী প্রতিষ্ঠান-সংগঠন তৈরি করে রেখে আসা। তাঁর অসাধারণ সব বর্ণনা এখানে, এই স্মৃতিকথায়, তুলে ধরেছেন লেখক ঈষণীয় মুন্সিয়ানার সাথে। এই বইখানি আনন্দ যোগাবে, প্রাণিত করবে এবং ‘ইচ্ছে করলে আমিও পারি’র মতো একটা মনোভাব পাঠকের মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।