ফ্ল্যাপে লিখা কথা মোহময় কানাডা ভ্রমণ কাহিনী হলেও ভ্রমণ কাহিনী নয়। টরেনটো ও মনট্রিয়েল শহর পরিভ্রমণকালে পরিচয় হয়েছে অনেক বাংলাদেশি বাঙ্গালির সঙ্গে। জানা গেছে তাদের অভিবাসনের কারণ। অধিকাংশ এসেছেন জীবিকার প্রয়োজনে। কেউ এসছেন নিশ্চিত্ন জীবন যাপনের জন্য। কেউ এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, কেউবা এসেছেন জীবনকে উপভোগ করার জন্য, কেউ এসেছেন দায়িত্ব পালন না করার জন্য। গ্রন্থে তার বিবরণ আছে।
কানাডার নিকট আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। গণতন্ত্র, মিউনিসিপাল সরকার, পরিবেশ ও প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া, পুলিম ব্যবস্থা, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিকুল আবহাওয়াকে জীবন যাপনের অনুকূল করা, ব্যকিত স্বাধীনতা, উদ্ভাবন সম্ভাবনা, অভিবাসন প্রক্রিয়া, ভিসা সমস্যা, গ্রন্থাগার, প্রকাশনা শিল্প, বইয়ের দোকান, দর্শনীয় স্থান, বাঙ্গালিদের সংস্কৃতি ইত্যাদি অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। নানা জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষার বৈচিত্র নিয়ে কানাডা মোহময়। কানাডায় শাসন নেই আছে ব্যবস্থাপনা। কানাডার জনগণই সরকার। কানাডাকে অনুসরণ করলে মনে হয় বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হতে পারে।
সূচিপত্র * ভ্রমণে প্রারম্ভিকতা * সরকারই জনগণ : জনগণই সরকার * কানাডাবাসীর রুচিবোধ * ২০০৪ সালের নির্বাচন * ব্যক্তিত্ব * দর্শনীয় স্থান * মনট্রিয়েল * মনট্রিয়েল * বাংলাদেশি বাঙ্গালি * বইয়ের দোকান * ইমিগ্রান্টস * এক নজরে কানাডা * নির্ঘন্ট
লেখক জনাব ফজলে রাব্বির জন্ম পুরাতন ঢাকার সাতরওজা এলাকায়। নানাবাড়িতে ১৯৩৪ সালে ৪ঠা জুলাই (সার্টিফিকেটে ২৫শে এপ্রিল ১৯৩৫)। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বাশবাড়িয়া গ্রাম, মুকসুদপুর থানা, গােপালগঞ্জ জেলা। পিতা মরহুম আবু আহমদ আবদুল আলী ছিলেন। পুলিশ অফিসার, সফল মঞ্চ-অভিনেতা ও বাংলাদেশে প্রথম যুগে নির্মিত ‘আকাশ ও মাটি’ সিনেমার একজন অভিনেতা। মাতা মরহুমা সৈয়দা সুলতানা বানু তার আত্মজীবনী ‘পঁচাশী ও হযরত শাহ আলী বােগদাদী' গ্রন্থ রচনা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ সমাপ্তির পর ফজলে রাব্বি ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমীতে সহ-প্রকাশনাধ্যক্ষ পদে যােগদান করেন এবং দীর্ঘকাল প্রকাশনা-বিক্রয়-মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত থেকে বাংলা একাডেমীর সহস্রাধিক গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা একাডেমীর ছাপাখানা তারই উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে স্থাপিত হয়। ছাপাখানা স্থাপনকালে লব্ধ তথ্য ও অভিভন্নতাকে অবলম্বন করে বাংলা। ভাষায় প্রথম ছাপাখানার ইতিকথা গ্রন্থ রচনা করেন। সরকার ১৯৭৯ সালে তাকে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক নিযুক্ত করেন। জাতীয় গ্রন্থকেলে যোগদানের পর তিনি নানাবিধ গ্রন্থ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সনেই জাতীয়ভাবে দেশের প্রায় সর্বত্র বাংলা মুদ্রণের দুইশত বর্ষ উদযাপিত হয়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ প্রতি বছর গ্রন্থ-সপ্তাহ হিসাবে উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয় এবং ২১শে-র বইমেলা দেশের সর্বত্র আয়ােজন করা হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলা নববর্ষে ‘প্রিয়জনকে বই উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলন করা হয়। গ্রন্থপাঠ প্রসার ও গ্রামে-গঞ্জে সুহৃদ সমিতি সংগঠন করা হয়। তিনি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার ‘সুধীজন পাঠাগার’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। তারই উদ্যোগে আত্মীয়-স্বজনদের সহযােগিতায় পৈতৃক গ্রাম বাঁশবাড়িয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘আহমদ স্মৃতি পাঠাগার'। জনাব ফজলে রাব্বি বাল্যকাল হতেই একজন গ্রন্থ প্রেমিক এবং সমগ্র জীবন প্রকাশক, বিক্রেতা, মুদ্রণ বিশেষজ্ঞ, গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাতা, গ্রন্থাগার-বান্ধব ও লেখক হিসেবে গ্রন্থের সেবায় নিয়ােজিত আছেন। কর্মসূত্রে, গ্রন্থ-উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে, সভায়, বিশ্ব গ্রন্থমেলায়, বিশেষজ্ঞ হিসেবে, প্রশিক্ষণ উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেছেন। তিনি একজন আগ্রহী পাঠক। পাঠ করতে গিয়ে কখনাে কোন বই এত ভাল লাগে যে তিনি বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেন যাতে বাঙ্গালি পাঠক বইটি পাঠ করে আনন্দ লাভ করতে পারে। এমনি করে তিনি ২০০২ সালকে সরকার গ্রন্থ-বর্ষ ঘােষণা করার পর তারই পরামর্শে সরকার বাংলা নববর্ষকে প্রিয়জনকে বই উপহার দেয়া ও দিবসটি সরকারিভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই বছরেই তাঁর ‘বাংলাদেশের গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার’ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যে বইয়ে প্রকৃতই বাংলাদেশে গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারের ইতিহাস ও বর্তমান চিত্র ফুটে উঠেছে। তার এক পুত্র ও দুই কন্যা, সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর স্ত্রী গুলশান আরা রাব্বি তার সকল কর্মে উৎসাহদাত্রী ও প্রেরণাস্বরূপ ছিলেন। তিনি সম্ভবত একমাত্র ও প্রবীণতম গ্রন্থ-বিশেষজ্ঞ যিনি নীরবে কাজ করে চলেছেন।