আমার বাবা ছিলেন একজন নেশাদার পাখি শিকারি। সরকারি চাকরি করতেন তিনি। চাকরিসূত্রে যেখানেই থাকতেন, মূল্যবান বন্দুকটা সেখানেই রাখতেন। মায়ের কাছে শুনেছি আমি, ঘুমের ভেতরও বাবা পাখি শিকার করতেন এবং চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে বসতেন, 'পাখি পাখি, মানিকজোড়-মদনটাক-গগনবেড় পাখি'! তাঁর ভাগ্যটাও পক্ষে ছিল। সারা জীবন চাক্রি করেছেন সুন্দরবন ঘেষাঁ শরণখোলা, রায়েন্দা, মোরেলগঞ্জ, চালনা (মংলা), দাকোপ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা), মোল্লাহাট ও ফকিরহাটে। যেখানেই তিনি ছিলেন, সেখানেই জুটিয়ে নিয়েছিলেন শিকারি বন্ধুদের। এমনকী চাক্রির মায়া ত্যাগ করেও শিকারে বেরুতেন তিনি। সুন্দরবনে ঢুকতেন চোরা শিকারি বন্ধুদের সাথে, শিকার করতেন হরিণ, বনমোরগ, সুন্দরী হাঁস, মদনটাক, মানিকজোড় পাখি। বাল্য-কৈশোরে তাঁর সাথে সুন্দরবনে শিকারে যাবার সুযোগ আমার বহুবার হয়েছিল। বাবার বন্দুকটা ছিল ইংল্যান্ডের। বাবার টার্গেটও মিস হতো না সহজে। বন্যপ্রাণী আইন তখনো ছিল, কিন্তু কড়াকড়ি ছিল না মোটেই। সুন্দরবনের নেশাটা তাই আমাকেও পেয়ে বসেছিল ভালভাবে। তাই সুযোগ পেলে এমনকী স্কুল কামাই করেও আমি চলে যেতাম শরণখোলা বা মোরেলগঞ্জে। বাবা হাসতেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ চোরা শিকারি বন্ধু (আমার শিকারি কাকা) বুঝে ফেলতেন আমার মতলবটা।
শরীফ খান। জন্ম : ৭ এপ্রিল, ১৯৫৩, গ্রাম : সাতশৈয়া, উপজেলা, ফকিরহাট, জেলা : বাগেরহাট। পিতা : খসরু আলী খান । মা : হাশেনা খাতুন। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। গল্প-উপন্যাস-স্মৃতিকথা-প্রবন্ধ-ফিচার-ভ্রমণকাহিনী সবকিছুই লিখছেন । শিশু সাহিত্যের সাতরঙা জগতেও তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। বাংলাদেশের কীর্তিমান পক্ষী ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পাখি ও বন্যাপ্রাণী আচরণবিদ শরীফ খানের দীর্ঘ গবেষণার ফল ‘হালতি পাখির বাসা’ ও ‘বড় হালতির ছানা শীর্ষক দুটি প্রামাণ্য ভিডিও চলচ্চিত্র; এই দুটি পাখির বাসা-ডিম-ছানাসহ সব তথ্য-উপাত্ত এদেশে একমাত্র তারই কজায়।। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রকাশিত ৮ খণ্ডের শিশু বিশ্বকোষের অন্যতম প্রদায়ক। এশিয়াটিক সােসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ১০ খণ্ডের বাংলাপিডিয়ারও তিনি অন্যতম প্রদায়ক । পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আই,ইউ,সি,এন কর্তৃক প্রকাশিত পাখি ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক Red data book প্রস্তুতেও তিনি অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। পুরস্কার : জাতীয় পর্যায়ে অগ্রণী ব্যাংক শিশু-সাহিত্য পুরস্কার, কবি কাদের নেওয়াজ স্মৃতি স্বর্ণপদক, কণ্ঠস্বর স্বর্ণপদক, বাগেরহাট।