ভূমিকা বাহাব্বলি কথাটির অর্থ হচ্ছে, ‘বাহ্ কী সুন্দর’ বা ‘ কী চমৎকার’। উত্তরবঙ্গের পল্লী অঞ্চলে এটি বহুলভাবে প্রচলিত শব্দ। শিশু-কিশোর এমনকি বয়স্ক মানুষেরাও তাদের চোখের সামনে হঠাৎ করে কোন চিত্তকর্ষক ঘটনা ঘটতে দেখলে ‘বাহাব্বলি’ শব্দ ধ্বনি দিয়ে আনন্দের বহির্প্রকাশ করে থাকে, সেই সাথে দেয় হাততালি। অনেক সময় ব্যঙ্গাত্নক অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়। এই গ্রন্থের ঘটনাপ্রবাহে শব্দটি এসে গেছে স্বাভাবিকভাবেই। এ দেশের শিশুদের শিক্ষার বেসিক ফাউন্ডেশন প্রদত্ত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নানা ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। শহরকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে গুনগত বিশাল ফারাক রয়েছে গ্রামবাংলা, বিশেষ করে পশ্চাৎপদ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। সরকারিভাবে পরিচালিত যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা তা দেশের এবং সম্ভবত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাবলিক সেক্টর হিসেবে বিবেচিত। নানামুখী সমস্যা ও সম্ভাবনায় আকীর্ণ দেশেল শিক্ষাব্যবস্থার বিবর্তন এখানে গল্প বলার মতো করে বিধৃত হয়েছে। কিছু বিষয় অনেকের কাছে জানা, আবার বহু কিছুই অজানা। বাস্তব পরিসংখ্যান ও তথ্যের ভিত্তিতে সেসবের উপস্থাপন ঘটেছে এই গ্রন্থে। সব শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা, তাদের বিদ্যায়লভুক্ত রাখা এবং গুনগত শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমেই গোটা জাতিকে বিকাশের পথে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষতার অভিশাপের মধ্যে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নগর ও গ্রামকেন্দ্রিক বেশ কিছু চরিত্রের মিশেল হয়ে গল্পের গাঁথুনি গড়ে উঠেছে। চরিত্রগুলো সব বাস্তব ভিত্তিক। কোথাও তাদের আসল না ব্যবহার করা হয়েছে, কোথাও কাল্পনিক।গল্প উপন্যাস যাঁরা লেখেন, চরিত্র -চিত্রায়নে নিজের চরিত্রের প্রতিচ্ছায় কি তাতে ফুটে উঠে না। ? প্রিয় লেখক রশীদ করীম তাঁর একটি উপন্যাসের ভূমিকায় চরিত্র সৃষ্টির বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘উপন্যাস সত্যি ঘটনা থাকে। যেটা সম্ভব অনেক সময় সেটাকেও সত্য বলে ধরে নেয়া হয়। এবং কল্পনার নির্মাণও থাকে।’ এ রীতি বর্তমান গ্রন্থেও অনুসরণ করা হয়েছে। এই গ্রন্থের মূল আবেদন হচ্ছে প্রাথমিক স্তরে উপযুক্ত শিক্ষাদানের মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা। কেবল শিক্ষিত সমাজই পারে একটি দেশকে দ্রুত উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে। সে চেষ্টায় শরিক হতে সবার প্রতি অুনরোধ রইলো। মাহবুব আলম ঢাকা ফেব্রুয়ারি, ২০০৭
১৯৫০ সালে রংপুর শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।শিক্ষা জীবনের শুরু রংপুর আদর্শ বিদ্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজে।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স এ মাস্টার্স শেষ করেন।১৯৭৭ সালে তিনি পোলান্ডের ওয়ার্শ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের এন্ড হাইয়ার ম্যানেজমেন্ট এর উপরে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের ডাকে সারা দিয়ে মাহবুব আলম ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ৬ নং সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং সাহসীকতার সাথে যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করেন।এই পুরোটা সময় তিনি সাথে রেখেছিলেন তিনটি নোট বুক যেখানে প্রতি দিনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।এই নোটবুক গুলোই পরবর্তীতে তার যুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।যুদ্ধ শেষে মাহবুব আলম বিসিএস প্রশাসনে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০৮ সালে যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।অবসরের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।চাকুরীর সুবাদে দেশবিদেশের বহু জায়গা ঘোরার অভিজ্ঞতা হয় লেখকের।মুক্তিযুদ্ধের লেখায় অবদানের কারনে তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয়দিবস উৎযাপনের জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে অংশ গ্রহণ করেন।তার গল্প নিয়ে "মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর" নামে দেশ টিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়।ব্যক্তিগত জীবনে সহধর্মিণী মর্জিনা বেগম (প্রধান শিক্ষিকা) এবং চার কন্যা সন্তানের জনক মাহবুব আলম ঢাকায় নিজ বাসভবনে থাকেন।তার সহযোদ্ধারা এখনো যুদ্ধ দিনের মত তাদের কমান্ডার মাহবুব ভাই এর কাছে কারনে অকারনে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন।