আভাসে-ইঙ্গিতে, শব্দ-সৌন্দর্যে, উপমা-চিত্রে নির্মিত হয় কবিতার নান্দনিক ভুবন। এই ভুবনের পরিভ্রমণকারী নিজেই নিজের ব্যঞ্জনার প্রতীক, জীবনব্যাপী রূপকার, অনুভবের অব্যাহত আরাধ্যকারী; আমরা তাকে কবি বলে জানি। অধরাকে ধরে এনে কবিতায় রূপ দেওয়াটাই তার কাজ। নির্মোহ এ কাজের মাঝে শব্দের আরাধনায় কবি কাটিয়ে দেন মূল্যবান একটি জীবন। এমন জীবনের গল্পের ভার কবিতাকারে প্রকাশ করার প্রয়াসে এস. এম. ফরিদ উদ্দীন কবিসত্তার বিন্যাস ঘটিয়েছেন ‘আঁধারের রং’ কবিতা গ্রন্থে। এই গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা আবেগ ও কল্পনাকে আশ্রয় করে ছন্দবদ্ধ ও আলঙ্করিক সৌন্দর্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। কবিতায় মানুষের জয়গান যেমন অনঢ়, অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাও তেমনি দৃঢ়। পোক্ত হাতে সচেতনভাবেই কলমের রেখা টানতে গিয়ে বাহ্যিক চাকচিক্যের জৌলুস এড়িয়ে মানবমুক্তির জয়গান গেয়েছেন বেশকিছু কবিতায়। যা তাকে কবিদের কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম করে তুলেছে। মানুষের এই পৃথিবীতে মানুষ যখন বিপথে পা বাড়ায়, কবি আক্ষেপে দ্রোহে ফেটে পড়েন কবিতার বলিষ্ট উচ্চারণে ঃ ‘পরিবর্তনের চোরাপথগুলো চলে গেছে বহুদূর, কবিতার আবেশগুলো গিলছে অসুর।’ আবার তিনি নিজের স্বরূপ পাঠকের কাছে জানাতে গিয়ে বলেছেন ঃ ‘আমি ঘোষণা করছি, আমি একেবারেই আমার মতো, আমি আর কারো মতো নই, আশেপাশে আছে যারা যতো।’ বাস্তব চিত্রকল্পের উৎসদুয়ার খুলতে গিয়ে এস.এম ফরিদ উদ্দীন মানুষের চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন অন্ধের উপাখ্যান কবিতায়, যা দারুণভাবে পাঠককে ভাবিয়ে তোলে : ‘কানার দিবারাত্রি সমান, দেখে শুধু অন্ধকার-- ইচ্ছে করে অন্ধ হলে দেখায় তারে সাধ্য কার !’ এস. এম. ফরিদ উদ্দীনের ‘আঁধারের রং’ কাব্যগ্রন্থটি পরোক্ষভাবে রাজনীতি, সমাজনীতি, মানবিক মূল্যবোধের একটি দলিল এবং প্রেম-প্রকৃতিসহ যাবতীয় সমাজ বাস্তবতার কথায় ভরপুর; বইটি পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হবে-- এমন প্রত্যাশা।