লালমােহন ঘােষ ছিলেন একজন দেশসেবক। তিনি আমার আদর্শ। মা-বাবার সন্তানদের মধ্যে আমি সব থেকে ছােটো। কিন্তু তার জীবনকথা লিখে রাখার এই গুরু দায়িত্ব আমার উপরেই পড়ল। এই কাজটা আমার ছােড়দার করার কথা, তিনি ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক, তার পক্ষে এই কাজটা সহজ এবং সুন্দরভাবে করা সম্ভব ছিল, কিন্তু আমার পক্ষে যা প্রায় অসম্ভব। ভাগ্যক্রমে পেলাম অধ্যাপিকা সুমিতা চক্রবর্তীকে। তিনি আমাকে সাহায্য করতে রাজি হলেন, শুরু করলাম ‘ লালমোহন ঘোষ : একটি জীবন ‘ বই-এর কাজ। বাবার অনুপস্থিতিতে কষ্ট করেও মা ভাইদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড়ভাই ইনজিনিয়ার যাদবপুর থেকে, মেজভাই আরটিস্ট গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে, সেজভাইকে এগ্রিকালচার পড়িয়েছিলেন, কিন্তু টি. বি. হওয়াতে পড়া শেষ কত পারেনি। পরে রেডিও ইনজিনিয়ারিং শিখে চাকরি পায় ; আর ছােটভাই ট্রিপল এম.এ. ও ল পাশ করে সাংবাদিকতা করে। এই অবস্থায় সবাই চাকরি পেলে আমাদের অবস্থা ভালই হত, কিন্তু 1947-1948 সালে চাকরির বাজার ছিল খুব খারাপ। বিশেষত আমাদের দেশ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। বাবা বিধানচন্দ্র রায়ের ডাকা মন্ত্রীসভায় যােগ দিলেন না। উপরস্ত সমালােচনা ও বিরোধিতা করলেন। তাতে কংগ্রেসের অনকেই তার উপর ক্ষুব্ধ হলেন। তাতে ভাইদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে গেল, এইভাবে অতিকষ্টে দিন কেটেছে মা-বাবার। তবুও বাবা কারাে কাছে মাথা নত করে ছেলেদের চাকরির জন্য অনুরােধ করেননি। এই অবস্থায় দিল্লি থেকে রাজ্যসভায় যােগ দেবার ডাক এল। তাও বাবা ফিরিয়ে দিলেন। এইভাবে শেষ জীবন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। সেই অবস্থাতেও লােকের দুঃখ কষ্টে এগিয়ে গেছেন। স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য দিনে আমার স্বাধীনতা-সংগ্রামী পিতার প্রতি এই আমার নিবেদন।
জন্ম ১৯৪৬, ২৪ এপ্রিল। পিতা ডাক্তার বিভূতিভূষণ সরকার। মাতা স্নেহকণা সরকার। উভয়েই প্রয়াত। পশ্চিমবাংলার পশ্চিমপ্রান্তিক ছোটো শিল্প-শহর কুমারডুবিতে কাটে বাল্য, কৈশোর। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছেন কুলটি গার্লস হাইস্কুল-এ (১৯৬১), কলেজের পাঠ সম্পন্ন হয়েছে আসানসোল গার্লস কলেজ-এ (বি.এ. ১৯৬৫)। বাংলায় এম. এ. ১৯৬৭-তে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মাইথন কলেজ ও ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে কিছুদিন কাজ করবার পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ (১৯৭২)। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা। বিবাহ ১৯৭৪, স্বামী প্রয়াত প্রবীর কুমার চক্রবর্তী। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের অধিবাসী, সুমিতা চক্রবর্তী পঠন-পাঠন ও নিজের লেখালিখির জগতেই থাকেন। এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা উনিশটি। অগ্রন্থিত প্রবন্ধ অনেক। সম্পাদিত গ্রন্থ আটটি। উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত 'বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলনের পুনঃসম্পাদিত সংস্করণ। প্রধানত বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে তাঁর বিচরণ। সাহিত্যতত্ত্বেও আগ্রহী।