আমার বয়স যখন ১০/১১ বছর, তখন থেকে আমি লাঙ্গল- জোয়াল কাঁধে করে আমাদের গরু দুটো নিয়ে মাঠে গিয়ে হাল চাষ ও ক্ষেত-খামারের অন্যান্য কাজ করেছি। আমি তখন ভাবতেও পারিনি যে, আমি কোনোদিন আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারবো। পরবর্তীতে আমি ক্যানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অজর্ন করি এবং ক্যানাডার বিশ্ববিদ্যলিয়ে অধ্যাপনা করি। দীর্ঘ দিন ধরে আমার ইচ্ছা ছিল আমি কিভাবে বরিশালের ধানক্ষেতের লাঙ্গল ছেড়ে এসে ক্যানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলাম, তা বর্ণনাকরে বাংলা ভাষায় একটি বই লিখবো। অবশেষে গত বছরের মার্চ মাসে আমি এ বইটি লেখা শুরু করি। আমার জীবনের প্রথম ১৪ বছরের কতগুলো ঘটনা বর্ণনা করে আমি আমার কয়েকজন বাংলাদেশী বিজ্ঞ বন্ধুকে লেখাটি দেখাই। আমার দুই বন্ধু, ড. এস. এম. ওয়াহেদুজ্জামান ও অধ্যাপক ফাওজিয়া বানু, আমার প্রাক্তন কৃতি ছাত্রী অধ্যাপক আয়শা সুলতানা এবং আমার ভাগ্নি অধ্যাপক কামরুন নাহার মুন্নি আমার লেখাটি পড়ে দুটো মন্তব্য করেছেন। তাঁদের প্রথম মন্তব্য হলো যে, আমার লেখাটা তাঁদের খুব ভালো লেগেছে। তাঁদের এই উৎসাহজনক মন্তব্য শুনে আমি অত্যন্ত খুিশ হয়েছি। আমার ৫৭ বছর পর প্রথম বাংলা লেখা তাঁদের মতো বিজ্ঞজনের ভালো লাগবে আমি তা আশা করতে পারিনি। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের এ মন্তব্য আমাকে বাংলা লেখার জন্য ভূমিকা বরিশালের ধানক্ষেতের লাঙ্গল ছেড়ে এসে ক্যানাডার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সহ ১০ আরো বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে। ওনাদের দ্বিতীয় মন্তব্য হলো যে, আমি যেন আমার সম্পূর্ণ জীবন-কাহিনী লেখা শেষ করে বইটি প্রকাশ করি। কারণ পাঠকরা জানতে চাইবে, ১৪ বছর বয়সের পর আমার জীবনে কি হয়েছে। আমিও তাদের সাথে একমত হয়েছি। আমার বয়স ৮৫ বছর। আমি যাদের সাথে বড়ো হয়েছি, আমার অনেক সহপাঠী এবং ছাত্রছাত্রী, এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। আল্লাহ সুবাহানাহু তা'য়ালার অশেষ রহমত, আমি এখনও বেঁচে আছি। আমি আমার গাড়ী ও মোটর বোট চালাই, মাছ ধরি, ভাড়াটে বাড়ির মেরামত ও সংস্কারের কাজকর্ম পরিচালনা করি, ক্যানাডা ও বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করি এবং বইপত্র লিখি। তবুও আল্লাহ আমাকেআর কতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন তা কারো জানা নাই। এছাড়া গত বছরের মার্চ মাসেই এসে গেলো বর্তমান বিশেষ সংকট। আমার বৃদ্ধ বয়স এবং অ্যাজমা সমস্যার ফলে আমার বেঁচে থাকাটা হয়ে গেলো আরো অনিশ্চিত।
Title
বরিশালের ধানক্ষেতের লাঙ্গল ছেড়ে এসে কানাডার ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক