‘বাড়ি’ কোথায়? অমর্ত্য সেনের কাছে প্রশ্নটার অনেক উত্তর। ঢাকা, যেখানে তাঁর শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে; শান্তিনিকেতন, যেখানে তিনি বাবা-মা এবং দাদু-দিদিমার কাছে থেকেছেন, স্কুলজীবন কাটিয়েছেন; কলকাতা, যেখানে কলেজে অর্থনীতি পড়া শুরু করেছেন, যোগ দিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনে; এবং কেমব্রিজ, উনিশ বছর বয়সে যেখানে পৌঁছেছিলেন, ট্রিনিটি কলেজে গবেষণা করতে। এই জায়গাগুলির প্রত্যেকটির পরিবেশ অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অমর্ত্য সেন। শান্তিনিকেতনে স্কুলের খোলামেলা পরিবেশ, কলেজ জীবনের কলকাতায় কফি হাউসের সজীব আড্ডা, কেমব্রিজে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং দার্শনিকদের সঙ্গে গভীর আলোচনা, এই সব কিছুই তাঁর চিন্তাভাবনার দিগন্ত প্রসারে খুব বড় ভূমিকা নিয়েছিল। ইউরোপ এবং আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে ১৯৬৩ সালে তিনি দেশে ফিরলেন। তখন তাঁর বয়স ত্রিশ। জীবনের এক মূল্যবান পর্ব সমাপ্ত হল। ‘জগৎ কুটির’ দেখায়, অমর্ত্য সেনের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা কীভাবে অর্থনীতি, দর্শন, পরিচিতি, কমিউনিটি, দুর্ভিক্ষ, লিঙ্গবৈষম্য, সামাজিক চয়ন, যুক্তিপ্রয়োগ এবং জনপরিসরে প্রকাশ্য আলোচনার মতো বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ধারণাগুলিকে গড়ে তুলেছে। এই বইয়ে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে জ্ঞানচর্চার আনন্দ এবং বন্ধুত্বের গুরুত্ব। সব কিছুর উপরে তিনি যে দিকগুলিতে জোর দিয়েছেন সেগুলি হল— আমাদের চিন্তাকে যথাসম্ভব উদার ও প্রসারিত করা, দেশকালের সীমা অতিক্রম করে মানবিক সহমর্মিতা এবং সহবোধের অনুশীলন করা, এবং জগতের মাঝে আপন কুটির খুঁজে নেওয়া।
অমর্ত্য সেন (Amartya Sen , জন্ম ৩রা নভেম্বর, ১৯৩৩) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন। অমর্ত্য সেনই জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডালে ভূষিত হন। তিনি বর্তমানে টমাস ডাব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোস, ট্রিনিট্রি কলেজ, অক্সব্রিজ এবং ক্যামব্রিজের একজন সিনিয়র ফেলো। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডের অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেল্থ্ এর সদস্য। তিনি প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি একটি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি প্রস্তাবিত নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন।অমর্ত্য সেন এর লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ Development as Freedom(বাংলা অনুবাদে উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা), Rationality and Freedom,The Argumentative Indian(বাংলায় তর্কপ্রিয় ভারতীয়)এবং The Idea of Justice ,Identity and Violence The Illusion of Destiny(বাংলায় পরিচিতি ও হিংসা). অমর্ত্য সেনের লিখিত বই বিগত চল্লিশ বছর ধরে প্রায় তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ।