বেলা অনেকটা বয়ে গেছে। বলতে গেলে পড়ন্ত বেলা। কিছু মানুষ আছেন সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করেন না। বেঠিক সময়ে বেঠিক কাজ করেন। আমি সেই প্রকৃতির একজন। অনেকটা অসময়ে এই বইটি লিখছি। যা অনেক আগেই লেখার দরকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই সাংবাদিকতা শুরু করি। দীর্ঘকাল তেল গ্যাস বিদ্যুৎ খাত নিয়ে লেখালেখি করেছি। নব্বই দশকের শুরুতে বিদ্যুতের ‘মেগাওয়াট’ ও গ্যাসের ‘টিসিএফ’ শব্দের সঙ্গে আমাদের ‘বন্ধুত্ব’ হয়। ওই সময় পাঠকও এগুলো কম বুঝতেন। তখন সারাদেশে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকতো না। উৎপাদনও হতো দুই-তিন হাজার মেগাওয়াট। লোডশেডিং চলতো রাতদিন সমানে। এই খাত সম্পর্কে স্পষ্ট ও পুরোপুরি ধারণা না থাকার কারণে অনেকের পক্ষে নির্ভুল প্রতিবেদন লেখা কঠিন হতো। বিষয়টি উপলব্ধি করলেন সরকারের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুরু হলো এই বিটের তরুণ সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এরপর তারা ‘নিরস’ এই খাত সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে শুরু করলেন। পাঠকও এসব বিভিন্ন ‘যান্ত্র্রিক’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত হলেন। এখন সাংবাদিকতায় জনপ্রিয় একটি বিট জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। প্রতিদিনই কোন না কোন গণমাধ্যমে এ বিষয়ক প্রতিবেদন থাকেই। এই বিষয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে প্রথম দিকে অবহেলিত রিপোর্টার হিসেবে পরিচিত ছিলাম। তখন এ খাতের রিপোর্টের তেমন গুরুত্ব ছিল না পত্রিকার পাতায়। রাজনীতি, অপরাধ, শিক্ষা, সংঘর্ষ, ক্যাম্পাস বিষয়ক রিপোর্টই ছিল সংবাদপত্রের অগ্রাধিকারে। এরপর ক্রমেই জ্বালানি খাত গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠলো। রিপোর্টার হিসেবে কদর বাড়তে থাকলো। এই খাত নিয়ে রিপোর্ট লেখা শুরু করি সম্ভবত ১৯৯৪ সাল থেকে। তখন এ বিষয়ে তেমন কোন কার্যকর বইও ছিল না। ফলে বিপাকে পড়ি। সরকারি কর্মকর্তা, সভা সেমিনার ও কর্মশালা- এগুলোর মাধ্যমেই এ খাত সম্পর্কে জানাশোনা শুরু করি। পরে দেশে বিদেশে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটা প্রশিক্ষণও নিয়েছি। তখনই উপলব্ধি করি যে এই খাত নিয়ে সাধারণ মহলে বোধগম্য হয়, এরকম একটি বই খুব প্রয়োজন। অবশেষে এই অবেলায় সেই কাজটি করছি। জানিনা এটা পাঠকদের কতটুকু কাজে লাগবে। আমি ভ‚তত্ত¡ বা বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম না। সাংবাদিকতা করতে এসে এই এনার্জি খাত বিষয়ে যতটুকু জানার সুযোগ পেয়েছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বইটি লিখেছি। এ বিষয়ে সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক তথ্য নিয়েছি। চেষ্টা করেছি সাদামাটা ভাষায় লিখতে। যাতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরও বুঝতে সমস্যা না হয়। বলতে গেলে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এটি একটি পরিচিতিমূলক বই। এক নজরে জানা যাবে বাংলাদেশে এই সম্পদগুলোর অবস্থা।