বাংলা কবিতায় বহুল উচ্চারিত নাম কবি নাসির আহমেদ। প্রায় পাঁচ দশক ধরে নিমগ্ন সাধকের নিষ্ঠায় কবিতাকে করে তুলেছেন বৈচিত্র্যময়। বিষয় এবং আঙ্গিক-প্রকরণের বহুমাত্রিকতায় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেও সম্পূর্ণ নতুন কণ্ঠস্বর সৃষ্টি করেছেন নাসির আহমেদ। এই কবির কবিতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মযহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ্, সিকদার আমিনুল হক, আবদুল মান্নান সৈয়দসহ বহু বরেণ্য ও অগ্রজ কবি। সৈয়দ শামসুল হক ‘বৃক্ষমঙ্গল’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য করেন, এই একটি উদ্ধৃতিতেই বোঝা যাবে কবিতায় কতটা স্বরাট সার্বভৌম তিনি, নাসির আহমেদ, প্রকৃতি ও বৃক্ষের রাজ্যে; রবীন্দ্রনাথের শেকলভাঙা এখনও এবং আজও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সমকালীনতা আর চিরকালীনতার মেলবন্ধন প্রয়াসী এই কবির এক একটি কাব্যগ্রন্থ মানে এক একটি নতুন অভিজ্ঞতার জগতে প্রবেশ। সেই বৈচিত্র্যেরই আর এক নতুন প্রকাশ ‘না হয় না দিলে আশা’। এই কাব্যগ্রন্থে করোনা-কবলিত বিশ্ববাস্তবতায় কবি নাসির আহমেদ একদিকে যেমন মানবতার বিপর্যয় চিত্রিত করেছেন, অন্যদিকে পরিণত কবির গভীর জীবনবোধে দার্শনিক উপলব্ধির নানামাত্রিক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। জন্ম-মৃত্যু, ইহকাল-পরকাল, পৃথিবী নামের এই প্রতিকূল গ্রহে নিরন্তর লড়াকু মানুষের শক্তি ও সম্ভাবনার আশ্চর্য আশাবাদী উজ্জীবিত উচ্চারণ কাব্যগ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে। নিসর্গ প্রকৃতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভ্রমণ করেছেন নাসির তার এই নবতম কাব্যগ্রন্থেও। নিঃসন্দেহে এই কাব্যগ্রন্থ নাসির আহমেদের পাঠকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা বলে বিবেচিত হবে।
নাসির আহমেদ এর জন্ম দ্বীপজেলা ভােলায় ।। ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতা শুরু। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন সাপ্তাহিক গণমুক্তি, বাংলাদেশ বেতার, অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা, জনকণ্ঠ, সমকাল, বর্তমান এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ নানা গণমাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণির এম এ কবি নাসির আহমেদ দৈনিক জনকণ্ঠে একটানা ১৫ বছর রাজনৈতিক কলাম লিখে হয়েছেন পাঠকপ্রিয়। লিখেছেন ছােটদের জন্য বহু গল্প-কবিতা-ছড়া আর বেতারটিভিতে প্রায় হাজারখানেক গান। একাধিক টিভি সিরিয়ালসহ খণ্ড নাটকের সংখ্যাও ডজনখানেক। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৯। সাহিত্যে অবদানের জন্য, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণু দে পুরস্কার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি সম্মাননা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, কাব্যকলা পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, সুকান্ত একাডেমি পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি পদক, কবিতালাপ পুরস্কার, জাতীয় মঙ্গল পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন বাচসাস, টেলিভিশন রিপাের্টার্স অ্যাসােসিয়েশন পুরস্কার, খাগড়াছড়ি থিয়েটার পদকসহ নানা সম্মাননা ও স্বীকৃতি।