ভূমিকা আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে বাংলায় কিছু লিখতে গেলে প্রথমেই আমার মনে হয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের কথা, ‘এই সব লেইখ্যা কেন যে সময় আর ক্ষমতা নষ্ট করেন আপনারা! কয়দিন থাকবো?’ এ প্রশ্নের উত্তর আমার কেন, কারোরই জানা নেই। তবু আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি যে, ভাষা যখন সরাসরি আমারেদ ইন্দ্রিয়লব্ধ অনুভূতি থেকে আংশিকভাবে হলেও স্বতন্ত্র হয়ে যায় তখনই আসে ভাষার মধ্যে একটা অন্তর্নিহিতি আসঞ্জনশীলতা বা কোহেরোন্স এবং শুধু তখনই ভাষায় সত্যিকার অর্থে বৈজ্ঞানিক বিমূর্ত ধারণাগুলো অনুপ্রবেশ করতে পারে এবং তখনই ভাষা হয়ে যায় যুক্তির হাতিয়ার ও বাহন। স্বীকার করতে লজ্জা নেই , যে বৈজ্ঞানিক এই আসঞ্জনশীলতা বাংলায় নিয়ে আসার আমার পক্ষে খুব সহজ কাজ নয়, তবু চেষ্টা করতে আমি পিছুপা হইনি। আইনস্টাইন এই ব্যাপারটা খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘বিজ্ঞানের ভাষা এভং সাধারণের ভাষার মধ্যে পার্থক্য কোথা থেকে আসে? বৈজ্ঞনিক ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষাই -বা কেন বলা হয়? বিজ্ঞান যা অর্জন করার চেষ্টা করে তা হলো বৈজ্ঞানিক ধানার তীক্ষ্ণতম প্রকাশ এবং তার আদ্যোপপান্ত স্বচ্ছতা যার ছাপ থাকে তার আন্ত:সম্পর্কে এবং তার ইন্দ্রিয়লব্ধ অনুভুতির উপাত্তের আনুষঙ্গিকতায়। ...বৈজ্ঞানিক ধারনা এবং বৈজ্ঞানিক বাষার জাতিবহির্ভূত চরিত্রের কারণ হলো এই যে, এদের সৃষ্টি করেছে সব দেশের সর্বকালের সর্বোত্তম সব প্রতিভা। ... তাদেরেই ভাষা পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে আমার বিভ্রান্তিকর বিশৃঙ্খলা থেকে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের অন্তর্নিহিত মর্মবাণীটি খুঁজে পেতে।’ এই প্রচেষ্টায় বাঙালি যে নেহায়েত পিছিয়ে নেই তার সামান্য উদাহারণ জগদীশ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং কাজী মোতাহের হোসেনের চিন্তা ও সুকৃতি থেকে বাঙালি পাঠককে উপহার দেয়াই এই প্রবন্ধ সঙ্কলনের মূল উদ্দেশ্য।
সূচি * আইনস্টাইনের উত্তরাধিকার * জগদীশচন্দ্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি * পরমাণু অচলায়তন বেক * রবীন্দ্রমানসে বিজ্ঞান * কাজী মোতাহার হোসেনের ‘শৃঙ্খলা’ * আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথ: জ্ঞানতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার * আইনস্টাইন ও বোর : কোয়ন্টাম বিতর্ক * রবীন্দনাথের উত্তরাধিকার * ভাষার স্থাপত্যে রবীন্দ্রনাথ ও চমস্কি * ‘আমাদের’ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা * বাঙালি বিজ্ঞান -ভাষা চিন্তা