‘কুহেলিকা’ বইয়ের কিছু কথাঃ নারী লইয়া আলোচনা চলিতেছিল।…. তরুণ কবি হারুন তাহার হরিণ-চোখ তুলিয়া কাপতে-কুজনের মত মিষ্টি করিয়া বলিল,‘ নারী কুহেলিকা!’ যে স্থানে আলোচনা চলিতেছিল, তাহা আসলে ‘মেস হইলেও, হইয়া দাঁড়াইয়াছে একটি পুরোমাত্রায় আড্ডা। দুই তিনটি চতুষ্পায়া জুড়িয়া বসিয়া প্রায় বিশ-বাইশজন তরুণ। ইহাদের একজন— লক্ষ্মীছাড়ার মত চেহারা—একজন ইয়ারের উরু উপাধান করিয়া আর একজন ইয়ারের দুই স্কন্ধে পা তুলিয়া নির্বিকার চিত্তে সিগারেট ফুকিতেছে। এ আলোচনায় কেবল তাহারই কোন উৎসাহ দেখা যাইতেছিল না। নাম তাহার—বখতে জাহাঙ্গীর কি উহা অপেক্ষাও নসিব-বুলন্দ দারাজ গোছের একটা-কিছু। কিন্তু অব্যবহারের দরুন তাহা এখন আর কাহারও মনে নাই। তাহাকে সকলে উপেক্ষা বা আদর করিয়া উলঝলুল বলিয়া ডাকে। এ নাম কে তাহাকে প্রথম দিয়াছিল এখন আর কেহই বলিতে পারে না। এ নাম দেওয়ার গৌরবের দাবী লইয়া বহু বাগবিতণ্ডা হইয়া গিয়াছে। এখন এই নামই তাহার কায়েম হইয়া গিয়াছে। ‘উলঝলুল্’ উর্দু শব্দ, মানে এর—বিশৃঙ্খল, এলোমেলো। কবি হারুন যখন নারীকে ‘কুহেলিকা' আখ্যা দিল, তখন কেহ হাসিল, কেহ টিপ্পনি কাটিল,—শুধু উলঝলুল কিছু বলিল না। এক টানে প্রায়…
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।