স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের মূলধারার নিজেদের মধ্যে ঐক্য, পরস্পরের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ যেমন ছিল, তেমনি দেশ ও জাতির প্রতি তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পাশাপাশি জীবন বাজি রেখে শ্রম ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে একনিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর রাতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এই মূলধারার অটুট বন্ধনে ফাটল ধরে। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু ফেরত আসার পরও এই ফাটল জোড়া না লেগে আরও বৃদ্ধি পায়। একজনের অতি আত্মবিশ্বাস, আরেক জনের নির্লিপ্ততা এবং তৃতীয় জনের অস্থিরতায় এই অটুট বন্ধনে ছেদ পড়ে। নেতৃত্ব পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সংঘাতে রূপ নেয়। অভিমান, অহংবোধ, নিজেদের মধ্যে দ্বিমত, চিন্তার পার্থক্য, অস্থিরতা থেকে পরস্পরের বিচ্ছিন্নতা ও শেষে সংঘাত; তাঁদের পতনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রকে নিজেদের কবজায় নিতে সক্ষম হয়। বাঙালি জাতির ধারাবাহিকতার অভাব। জাতির এই বৈশিষ্ট্য আবারও প্রমাণিত হলো। বিজয়ী হওয়ার পর রাষ্ট্রনির্মাণে উদাসীনতা পেয়ে বসে। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের পর রাষ্ট্রনির্মাণ যে আরও কঠিন, এই উপলব্ধিবোধ জাগ্রত না হওয়ায় এর খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে। এই বই বিভ্রান্তি কাটাতে পারবে কি না জানি না। তবে বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।